Sunday, December 10, 2017

Ragging:খাটের ওপর দাঁড় করিয়ে মৌখিক ধর্ষণ…!

খাটের ওপর দাঁড় করিয়ে মৌখিক ধর্ষণ!

ফারিয়া আক্তার, সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সময়টা ২০০৮ সাল। সবেমাত্র ভর্তি হয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা নিয়ে ভর্তি হওয়ার বেশ কিছুদিন পরে হলে উঠেছি। ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কারণ আমি আগে 
থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাগের বিষয়ে অবগত ছিলাম। তবে যেটুকু শুনতাম তা ছিলো ছেলেদের হলে র‍্যাগ দেয়া হয়। কিন্তু মেয়েরাও যে র‍্যাগ দিতে পারে এটা
 জানা ছিল না।
ক্যাম্পাস থেকে হলে ফিরেছি বিকেলে। সন্ধ্যার পর আমার রুমে আসলেন দুইজন বড় আপু। আমি তাদের চিনতাম না। তারা আমার রুমমেট ছিলেন না। তারা জিজ্ঞাসা 
করলেন কেমন আছি। বলেই আমার মোবাইল হাতে নিয়ে নিলেন। আমার মোবাইলে কে কে এসএমএস করেছে তা চেক করতে লাগলেন। আমিতো অবাক! আপু কি করছেন
 এসব। অন্যের মোবাইলের এসএমএস পড়া কি ঠিক? বলতেই এক আপু তেড়ে আসলেন আমার দিকে। আরেক আপু বললেন চুপ। আমি বললাম, আপু আমিতো 
আপনাদের চিনি না। বলতে বলতে আরো দুইজন আপু আমাদের কক্ষে প্রবেশ করলেন। তারা এসেই নির্দেশ দিলেন টেবিলের উপর উঠে দাঁড়াতে।
একেতো আমার মোবাইল নিয়ে ম্যাজাজ খারাপ। এর মধ্যে আবার এমন নির্দেশে আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই এক আপু বেয়াদব মেয়ে 
বলেই আমার গালে চড় বসিয়ে দিলেন। মাথাটা ঘুরে গেল। বুঝতে বাকি রইলো না খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে।
মনে হলো আমার পাশে কেউ নেই। তাই তারা যা বলবেন তাই করতে আমাকে বাধ্য করা হলো। এরই মাঝে এক আপু আমার প্রতি একটু সদয় হলেন। বললেন টেবিলের 
উপর দাঁড়াতে হবে না। তুই খাটের উপর দাঁড়া। যাইহোক বিষয়টি সহজ মনে হলো তাই খাটের ওপর দাঁড়িয়ে রইলাম। একজন বললেন ওড়নাটা দিয়ে মাথায় পাগড়ি বানাতে
 । কথামতো কাজ করতে হলো। একজন বলে উঠলো তোর ইয়েগুলো সুন্দর!!!
আপু এসব কি বলছেন, না ভালো লাগছে তোকে (?) পাবে!!! এমন আরো অনেক বাজে বাঝে কথা বলা হলো। সেগুলো আমি মুখে আনতে পারছিনা। আমি লজ্জায় 
একসময় কান্না করতে থাকলাম। কিন্তু তাদের কটূক্তি খারাপ খারাপ কথা চলতে থাকলো। এক আপু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে অন্যরকম অভিনয় করতে লাগলো। চলতে
 লাগলো অশ্লীল অস্রাব্য গালাগালি। যেন খাটের ওপর দাঁড় করিয়ে আমাকে একপ্রকার মৌখিক ধর্ষণ করা হলো। আমি আর ভাবতে পারছি না।
মনে হচ্ছে যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এরই মাঝে আমার আম্মু মোবাইলে কল করলেন। পরিস্থিতি অন্যদিকে ঘুরে গেল। মা অসুস্থ্য জানলেন আমার ছোট ভাই। 
পরিবেশটা তখন গম্ভীর হয়ে গেল। একে একে কক্ষ ত্যাগ করলেন সবাই। মোবাইলটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে এক আপু বললেন সরি ফারিয়া মজা করলাম, ডোন্ট মাইন্ড
আজ আমি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি। ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম-এ rag  নিয়ে স্মৃতিচারণের ঘোষণা দিয়েছে। তাই rag এর  অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলাম।
 আমার কথা হলো মজা অন্যভাবেও করা যায়। পরিচিত হওয়া যায়। তাই বলে এভাবে নাজেহাল করার কোন মানে হয়না। আমাকে  rag  দেয়া সেই আপুদের সঙ্গে কিন্তু 
আমার ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তাদেরকে ক্যাম্পাসে দেখলে আমি মাথা নিচু করে রাখতাম। তারাও আমাকে দেখেননি এমন ভাব করতেন। তাহলে কেন এভাবে আমাকে 
র‍্যাগের নামে এভাবে নাজেহাল করা হলো এ প্রশ্ন রইলো?

উৎসঃ   ক্যাপাসলাইভ ২৪
04 Feb, 2015

No comments:

Post a Comment