Saturday, February 14, 2015

ভ্যালেন্টাইন ডে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এর পর্যালোচনা।

     ভ্যালেন্টাইন ডে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এর পর্যালোচনা।


 ভ্যালেন্টাইন ডে – ইসলামে কি ভালবাসা নিষিদ্ধ?



“ তাঁর নিদর্শনসমূহের মাঝে আরো হলো, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাঝে প্রশান্তি খুঁজে পাও। আর তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা এবং সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই এর মাঝে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে ”। [সূরা আর-রূম, আয়াত ২১]

পরবর্তী আয়াতগুলোতে আল্লাহ সুবহানু ওয়াতায়ালা তাঁর আরো কিছু উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের বর্ণনা দিয়েছেন। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, আল্লাহ নারী-পুরুষের মধ্যকার এই সম্পর্ককে স্থান দিয়েছেন রাত-দিন এবং আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিদর্শনের সাথে। অতএব বুঝতেই পারছেন, ভালোবাসা মোটেই তুচ্ছ কোন বিষয় নয়!
 
“ কোন সন্দেহ নেই, তার জন্য আমার ভালোবাসায় কোন ঘাটতি ছিল না ” - বলুন তো, কথাগুলো কার হতে পারে?
এই বাক্যটি ছিল আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের, যা তিনি বলেছিলেন তাঁর স্ত্রী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা সম্পর্কে। তিনি এখানে কোন লুকোছাপা করেননি। তিনি শুধু এও বলেননি যে, আমি তাকে ভালো বাসতাম। বরং তিনি তাঁর ভালোবাসাকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সবার মাঝে প্রকাশ করেছেন।
 
সুতরাং এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, ইসলামে ভালোবাসা মোটেই নিষিদ্ধ কিছু নয়। আল্লাহর জন্য আপনার মুসলিম ভাইকে ভালোবাসা, এমনকি সেই কথা তার কাছে প্রকাশ করার প্রতি বরং ইসলামে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কিংবা আপনি যদি সৎ এবং আল্লাহভীরু কোন দম্পতির দিকে তাকান, দেখতে পাবেন আল্লাহ ‘বিয়ে’ নামক অত্যন্ত শক্তিশালী একটি বন্ধনের মাধ্যমে তাদের কত কাছে নিয়ে এসেছেন। এটি কোন হলিউড বা বলিউড মুভির কৃত্রিম ভালোবাসার গল্প নয়, বরং পারস্পরিক সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ।
ভালোবাসা যদি ইসলামে অনুমোদিতই হবে, তাহলে ভালোবাসা দিবস পালন করতে অসুবিধা কোথায়?

এক্ষেত্রে প্রথম সমস্যাটি হলো ভ্যালেন্টাইন ডে’র উৎপত্তি প্রসঙ্গে।

একেবারে সঠিক সময়টি নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও, ভালোবাসা দিবসের মূল উৎপত্তি যে রোমান প্যাগানদের কাছ থেকে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তারা দেবতা লুপারক্যালিয়াসকে সন্তুষ্ট করার জন্য মধ্য ফেব্রুয়ারিতে এক ধরনের উৎসবের আয়োজন করতো, যেদিন পশু উৎসর্গ করা হতো এবং লটারির মাধ্যমে পরবর্তী এক বছরের জন্য নারীপুরুষের জোড়া নির্ধারণ করা হতো।

খৃস্টানরা যখন রোম দখল করে নেয়, ভালোবাসা দিবসের প্রেক্ষাপটও খৃস্টানীকরণ করা হয়। লুপারক্যালিয়াসের জায়গা দখল করে নেয় সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। ক্যাথলিকদের ইতিহাসে মোটামুটি তিন জন বিখ্যাত সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের উল্লেখ পাওয়া যায়। একজন তো নিজেই প্রেমিক পুরুষ ছিলেন, একজন জেলারের মেয়ের প্রেমে পড়ে প্রাণ দিয়েছিলেন আর একজন সম্রাটের অলক্ষ্যে সৈনিকদের মধ্যে ঘটকালি করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। ঘটনা যাই হোক, পোপ গেলিয়াসই সর্বপ্রথম খৃস্টান মোড়কে ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে হাজির হন। তার আগে পিউরিটানদের সময় এটি নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে আমেরিকায় এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এর মূল উৎস এখনও খুঁজে পাওয়া যাবে ভ্যালেন্টাইন ডে’র জনপ্রিয় প্রতীক কিউপিডের মাঝে, যা ছিল রোমান প্যাগানদের ভালোবাসা আর সৌন্দর্য্যের দেবতা।    
 
আর আজ আমরা মুসলিম নামধারীরা তবে কি পালন করছি? ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে কি আমরা সন্তুষ্ট নই? আল্লাহর জন্য যখন প্রতিটি মুসলিমকে সারা বছরই ভালোবাসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা কেন সেই ভালোবাসাকে একটিমাত্র দিনের মাঝে সীমাবদ্ধ করতে চাচ্ছি?
আল্লাহকে বাদ দিয়ে যারা মূর্তিপূজা করতো, আমরা কি তবে সেই রোমান প্যাগানদের পূজার মাঝেই সুখ খুঁজে বেড়াচ্ছি না?

ভেবে দেখুন, আপনি কি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হতে চান নাকি আমাদের প্রতিপালক যে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার জন্য আমাদের মনোনীত করেছেন, তার অন্তর্ভুক্ত থাকতে চান। আমরা আজ কেন অন্যের ধারস্থ হচ্ছি, যখন আমাদের জন্য সামনে আছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত? যিনি তাঁর স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা আর দাম্পত্য জীবনের এক অসাধারণ ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন আমাদের জন্য।
 
“...  প্রত্যেক জাতির জন্য আমি সৃষ্টি করেছি নির্দিষ্ট শারিয়াহ এবং নির্দিষ্ট পন্থা ...” [সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৪৮]
“ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আমি নির্ধারণ করে দিয়েছি ইবাদাতের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, যা তারা অনুসরণ করে থাকে ...” [সূরা হাজ্জ, আয়াত ৬৭]

অর্থাৎ কিবলা, সালাত বা সিয়াম যেমন নির্দিষ্ট, মুসলিমদের উৎসবও তেমনি নির্দিষ্ট। কুফফার, তা সে মুশরিকই হোক আর আহলে কিতাব, তাদের অনুকরণ ইসলামে নিষিদ্ধ। আর তাদের প্রচলিত সংস্কৃতি এবং আচরণের চেয়ে বেশি অনুকরণযোগ্য আর কি-ই বা হতে পারে?
আল্লাহ ইসলামকে সকল দেশের সকল মানুষের জন্য উপযোগী করে পাঠিয়েছেন। অতএব জীবনের চলার পথে কোন ক্ষেত্রেই কুফফারের অনুকরণ মুসলিমদের প্রয়োজন নেই। এটি পরীক্ষিত সত্য যে, যারা কাফিরদের অনুকরণ করে বা তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ করে, তাদের মাঝে কাফিরদের জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং তারা কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতেও ইতস্তত বোধ করে না। তারা মুসলিম, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামের বীরযোদ্ধাদের ভুলে গিয়ে কাফিরদের নিয়েই সার্বক্ষণিক মেতে থাকে।
 
দ্বিতীয়ত ভালোবাসা দিবসের নামে দেশব্যাপী অশ্লীলতা আর বেহায়াপনার যে প্রদর্শনী চলে, তা কোনভাবেই ইসলামে অনুমোদিত নয়। পার্টি, কনসার্ট আর মোজ মাস্তির নাম দিয়ে তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা, হাসিঠাট্টা বা উপহার আদানপ্রদান; কোনটাই ইসলামে বৈধ নয়। দাড়িওয়ালা বয়ফ্রেন্ড, হিজাবি গার্লফ্রেন্ড, নিষ্পাপ দৃষ্টি কিংবা যাস্ট ফ্রেন্ড নাথিং এলসের কোন স্থান ইসলামে নেই। সাবধান!! কোনভাবেই যেন আমরা ভ্যালেন্টাইন ডে’র ইসলামাইজেশন করার চেষ্টা না করি। 
 
তাহলে? ইসলামে ভালোবাসার প্রক্রিয়াটা কেমন?

যাকে আমরা সত্যিই ভালোবাসি, এই পৃথিবীতে আমরা তার উন্নতি এবং পরকালে তার সফলতা কামনা করি। আমরা ঠিক সেভাবেই তাদের ভালোবাসি যেভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের শিখিয়েছেন। এর জন্য আমাদের কোন অবৈধ সম্পর্ক আর বেহায়াপনার আশ্রয় নিতে হয় না কিংবা হাজার হাজার টাকা এবং আমাদের মূল্যবান সময়ের অপচয় করতে হয় না।

“ যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাদের জন্য বিয়ের চেয়ে উত্তম আর কিছুই নেই ” [সুনান ইবন মাজাহ]

“ আর বিশ্বাসী পুরুষ এবং বিশ্বাসী নারীরা হচ্ছে একে অপরের বন্ধু। তারা সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে, আর তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত আদায় করে, আর তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ মেনে চলে। তাদের প্রতি অবশ্যই আল্লাহ করুণা বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সম্মানিত এবং মহাজ্ঞানী ” [সূরা তাওবা, আয়াত ৭১]

আমরা শুধু নির্দিষ্ট একটি দিনেই আমাদের ভালোবাসাকে সীমাবদ্ধ করে রাখি না। আর আমাদের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন কোন উৎসবও আমরা পালন করি না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ যে ব্যক্তি কারো অনুকরণ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত ”।
 
সবাইকে ভালবাসলাম, কিন্তু যিনি আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, আমাদের জন্য আলো বাতাস মাটি পানি সৃষ্টি করেছেন, যার আরো অসংখ্য নিয়ামাতের মাঝে আমরা দিবানিশি নিমজ্জিত, তাঁকে ভালোবাসার কথা কি আমাদের একবারও মনে হয়েছে?
তাঁর প্রিয়তম মানুষটিই শিখিয়ে গেছেন সেই দু’আ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ দাউদ আলাইহিস সালামের একটি দু’আ ছিল এরকম, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ভিক্ষা চাই আপনার ভালোবাসা; আপনাকে যারা ভালোবেসেছে, তাদের ভালোবাসা এবং এমন কাজ যা আপনাকে ভালোবাসার কাছাকাছি নিয়ে যায়। হে আল্লাহ! আমার নিজের সত্তা, পরিবার এবং শীতল পানির চেয়েও আপনার প্রতি ভালোবাসা, আমার কাছে প্রিয়তর করে দিন ”।

ইসলামের দৃষ্টিতে ভ্যালেন্টাইন ডে/বিশ্ব ভালবাসা দিবস/Valentine day

“আসসালামু আলাইকুম”
সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন।
ভালবাসার পরিচয় :
‘ভালবাসা’ এক পবিত্র জিনিস যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ হতে আমরা পেয়েছি। ভালবাসা’ শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহ তা‘আলা সকল ইতিবাচক কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালবাসেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
‘‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুহসিনদের ভালবাসেন।’’(সূরা আল-বাকারা:১৯৫)
ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পবিত্রতা অবলম্বন করা এ দুটিই ইতিবাচক কর্ম। তাই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালবাসেন। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।’’(সূরা আল-বাকারা:২২২)
তাকওয়া সকল কল্যাণের মূল। তাই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে খুবই ভালবাসেন। তিনি বলেন,
فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِين
‘‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।’’(সূরা আল ইমরান:৭৬)
পবিত্র এ ভালবাসার সাথে অপবিত্র ও নেতিবাচক কোন কিছুর সংমিশ্রণ হলে তা আর ভালবাসা থাকে না, পবিত্রও থাকে না; বরং তা হয়ে যায় ছলনা,শঠতা ও স্বার্থপরতা।
ভালবাসা, হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা এক অদৃশ্য সুতোর টান। কোন দিন কাউকে না দেখেও যে ভালবাসা হয়; এবং ভালবাসার গভীর টানে রূহের গতির এক দিনের দূরত্ব পেরিয়েও যে দুই মুমিনের সাক্ষাত হতে পারে তা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার এক বর্ণনা থেকে আমরা পাই। তিনি বলেন,
النعم تكفر والرحم تقطع ولم نر مثل تقارب القلوب
‘‘কত নি‘আমতের না-শুকরি করা হয়, কত আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হয়, কিন্তু অন্তরসমূহের ঘনিষ্ঠতার মত (শক্তিশালী) কোন কিছু আমি কখনো দেখি নি।’’
(ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ :হাদীস নং২৬২)
ভালবাসা দিবস কি ও এর ক্ষতিকর প্রভাব
এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ ইতিহাসটির বয়স সতের শত সাঁইত্রিশ বছর হলেও ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে এর চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিক কালেই। দুই শত সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারির কথা। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদেরকে গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিত। এ অপরাধে সম্রাট ক্লডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নাম করণ করা হয় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’।
বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয়। অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। আর যায় কোথায় ! লুফে নেয় বাংলার তরুণ-তরুণীরা। এরপর থেকে ঈমানের ঘরে ভালবাসার পরিবর্তে ভুলের বাসা বেঁধে দেয়ার কাজটা যথারীতি চলছে। আর এর ঠিক পিছনেই মানব জাতির আজন্ম শত্রু শয়তান এইডস নামক মরণ-পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। মানুষ যখন বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালবাসার অভাব ছিলনা। আজ পৃথিবীতে ভালবাসার বড় অভাব। তাই দিবস পালন করে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়! আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালবাসা নামক ভালো বস্তু থাকতে পারে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হৃদয় থেকে ভালবাসা উঠিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকার। দিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপা-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধুই কি তাই ! অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খোশ গল্প। এ হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কর্মসূচি! বিশ্ব ভালবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে অন্তত নামকরণটি যথার্থ হতো।

বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালনের ক্ষতিকর কিছু দিক :
১. ভালবাসা নামের এ শব্দটির সাথে এক চরিত্রহীন লম্পটের স্মৃতি জড়িয়ে যারা ভালবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন, পৃথিবীবাসীকে তারা সোনার পেয়ালায় করে নীল বিষ পান করিয়ে বেড়াচ্ছেন।
২. তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ
 ‘‘আর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না।’’(সূরা আল মায়িদাহ : ৬৪)
৩. নৈতিক অবক্ষয় দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে।
৪. নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করছে। যারা ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
 ‘‘ যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি..।’’(সূরা আন-নূর :১৯)
বস্তুত যে সমাজেই চরিত্র-হীনতার কাজ ব্যাপক, তথায় আল্লাহর নিকট থেকে কঠিন আযাব সমূহ ক্রমাগত অবতীর্ণ হওয়া অবধারিত,  আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন :
… لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمِ…
‘‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায় নি।’’(ইবনু মাজাহ, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং-৪০০৯)
৫. তরুণ-তরুণীরা বিবাহ পূর্ব দৈহিক সম্পর্ক গড়তে কোন রকম কুণ্ঠাবোধ করছে না। অথচ তরুণ ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যখন মিশরের এক রানী অভিসারে ডেকেছিল, তখন তিনি কারাবরণকেই এহেন অপকর্মের চেয়ে উত্তম জ্ঞান করেছিলেন। রোমান্টিক অথচ যুব-চরিত্রকে পবিত্র রাখার জন্য কী অতুলনীয় দৃষ্টান্ত! আল্লাহ জাল্লা শানুহু সূরা ইউসুফের ২৩-৩৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন এ ভাবে-
‘‘সে যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিল সে তার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করল ও দরজাগুলো বন্ধ করে দিল এবং বলল, ‘আস।’ সে বলল, ‘আমি আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি আমার প্রভু; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারীরা সফলকাম হয় না। সে রমণী তো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন দেখতে পেত। আমি তাকে মন্দ-কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। ওরা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল, তারা স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল। স্ত্রীলোকটি বলল, ‘যে তোমার পরিবারের সাথে কুকর্ম কামনা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ বা অন্য কোন মর্মন্তুদ শাস্তি ছাড়া আর কি দণ্ড হতে পারে? ইউসুফ বলল, ‘সে-ই আমার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করছিল।’ স্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল, ‘যদি তার জামার সামনের দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী, কিন্তু তার জামা যদি পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী। গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়েছে তখন সে বলল, ‘নিশ্চয়ই এটা তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের ছলনা তো ভীষণ। হে ইউসুফ! তুমি এটা এড়িয়ে যাও এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর; তুমিই তো অপরাধী। নগরের কিছু সংখ্যক নারী বলল, ‘আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎকাজ কামনা করছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করেছে, আমরা তো তাকে স্পষ্ট ভুলের মধ্যে দেখছি। স্ত্রীলোকটি যখন ওদের কানা-ঘুষার কথা শুনল, তখন সে ওদেরকে ডেকে পাঠাল, ওদের জন্য আসন প্রস্তুত করল, ওদের সবাইকে একটি করে ছুরি দিল এবং ইউসুফকে বলল, ‘ওদের সামনে বের হও।’ তারপর ওরা যখন তাঁকে দেখল তখন ওরা তাঁর সৌন্দর্যে অভিভূত হল এবং নিজেদের হাত কেটে ফেলল। ওরা বলল, ‘অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা। সে বলল, ‘এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকাজ কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইউসুফ বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! এ নারীরা আমাকে যার দিকে ডাকছে তার চেয়ে কারাগার আমার কাছে বেশী প্রিয়। আপনি যদি ওদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। তারপর তার প্রতিপালক তার ডাকে সাড়া দিলেন এবং তাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।(অনুবাদ, সূরা ইউসুফ : ২৩-৩৪)
৬. শরীরে উল্কি আঁকাতে যেয়ে নিজের ইয্‌যত-আব্রু পরপুরুষকে দেখানো হয়। যা প্রকাশ্য কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে তা আঁকা হয়, উভয়য়ের উপরই আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ *
‘‘যে ব্যক্তি পর-চুলা লাগায় এবং যাকে লাগায়; এবং যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে আঁকে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন।’’(বুখারী,কিতাবুল লিবাস,হাদিস নং৫৪৭৭)
মূলত যার লজ্জা নেই, তার পক্ষে এহেন কাজ নেই যা করা সম্ভব নয়। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِذَا لَمْ تَسْتَحِ فَاصْنَعْ مَا شِئْت
‘‘যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই করতে পার।’’(বুখারী, কিতাবু আহাদীসিল আম্বিয়া, হাদিস নং৩২২৫)
৭. ভালবাসা দিবসের নামে নির্লজ্জতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।  আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
… وَلَا فَشَا الزِّنَا فِي قَوْمٍ قَطُّ إِلَّاكَثُرَ فِيهِمُ الْمَوْتُ…
‘‘যে জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দেবে।’’(মুয়াত্তা মালিক, কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং-৮৭০)
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলোর ভাষ্য কতটা বাস্তব বর্তমান বিশ্বের বাস্তব চিত্র এর প্রমাণ বহন করে। অবাধ যৌন মিলনের ফলে “AIDS” নামক একটি রোগ বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটা এমনি মারাত্মক যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে এর কোন আরোগ্য নেই। কিছু পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে :
1.     বিশ্বের ১৪০ কোটিরও বেশী লোক থেকে ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত এক লক্ষ এগার হাজারেরও বেশী “AIDS”  রোগীর তালিকা পাওয়া গিয়েছে।’’(আব্দুল খালেক, নারী,(ই,ফা,বা.ঢাকা,১৯৮৪ইং) পৃ. ৯৬)
2.     ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২,৪২,০০০ এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ১,৬০,০০০ মৃত্যু বরণ করেছিল। ১৯৯২ সালের গবেষণালব্ধ তথ্য মতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৫০ লক্ষ্য এইডস রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।(Baron& Byrne, Ibid., P. 329)
3.     ৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৯৬ এর Time International’ পত্রিকায় পরিবেশিত তথ্য মতে, ৬৫ লক্ষ জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে এই ঘাতক ব্যাধি। আগামী ৫ বৎসরে আরও ৩ কোটি লোক মারা যাবে এই রোগে।(মাসিক পৃথিবী, (ঢাকা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯), পৃ. ৫)
4.     বিশ্ব এইডস দিবস ২০০০-এর প্রাক্কালে জাতিসংঘ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে : ‘‘ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারী এবং সমকামিতা, ইতর রীতির যৌনতার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপ, রাশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন-আমেরিকা ক্যারিবীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় এইডস দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে প্রতি তিনজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এইডস আক্রান্ত। শিশুদের ৮০ ভাগ এই রোগের ভাইরাসে আক্রান্ত। আফ্রিকার উপ-সাহারা এলাকায় এ বছর ১০ লাখেরও বেশী লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে নতুন করে এইডস দেখা দিয়েছে। মাত্র একবছরে এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যেও নতুন করে এইডস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’’(রয়টার্স, দৈনিক ইনকিলাব, (ঢাকা, ২রা ডিসেম্বর ২০০০ ইং) পৃ .১-২)
5.     ৬. জাতিসংঘের দেয়া তথ্য মতে : ‘‘বিশ্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক এইডসে আক্রান্ত ২০০০ইং সনে ৫০ লাখ লোক নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে।’’(প্রাগুক্ত)
6.     ৭. ‘‘বিশ্ব এইডস দিবসের আলোচনা সভায় (ঢাকা) বাংলাদেশের তৎকালীন সমাজকল্যাণ, প্রতি মন্ত্রী ড. মোজাম্মেল হোসেনের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে এইডস ভাইরাস বহনকারী রোগীর সংখ্যা একুশ হাজারের বেশী।’’(দৈনিক ইনকিলাব, (স্টাফ রিপোর্টার, বিশ্ব এইডস দিবসে ঢাকায় আলোচনা সভা, ২রা ডিসেম্বর, ২০০০ ইং) পৃ.১)
সিফিলিস-প্রমেহ : বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমেরিকার শতকরা ৯০% অধিবাসী রতিজ দুষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেখানকার সরকারী হাসপাতালগুলিতে প্রতি বৎসর গড়ে দুই লক্ষ সিফিলিস এবং এক লক্ষ ষাট হাজার প্রমেহ রোগীর চিকিৎসা করা হয়। (Encyclopedia Britannica, V. 23, P. 45.) এছাড়াও আমেরিকায় প্রতি বৎসর ত্রিশ-চল্লিশ হাজার শিশু জন্মগত সিফিলিস রোগে মৃত্যুবরণ করে। ( আঃ খালেক, নারী, (ঢাকা : ই.ফা. বা., ১৯৮৪ ইং), পৃ. ৯৬)
Dr. Laredde বলেন— ফ্রান্সে প্রতি বৎসর কেবল সিফিলিস ও তদ-জনিত রোগে ত্রিশ হাজার লোক মারা যায়। (প্রাগুক্ত)
হার্পিস রোগ :
ব্যভিচারের কারণে জননেন্দ্রিয়ে সৃষ্ট অত্যন্ত পীড়াদায়ক রোগ হলো Genital Herpes. মার্কিন জনসংখ্যার শতকরা দশ ভাগ (জনসংখ্যা ২৬ কোটি ধরলে তার ১০% হয় ২ কোটি ৬০ লক্ষ) এই রোগে আক্রান্ত। এটাই সব নয়। প্রত্যেক বৎসর প্রায় ৫০০,০০০ মানুষের নাম এই মারাত্মক হার্পিস রোগীদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। (Baron & Byrne, Social psychology : Understanding Human Interaction, P. 329.)
৮. বিশ্ব ভালবাসা দিবসের এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্ম-কাণ্ডের ফলে মুসলিম যুব-মানস ক্রমশ ঈমানি বল ও চেতনা হারিয়ে ফেলছে।
৯. মানুষের হৃদয় থেকে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় উঠে যাচ্ছে।
প্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনেরা ! ভালবাসা কোন পর্বীয় বিষয় নয়। এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদান। সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করি।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড হতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হেফাযত করুন। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যেন কাউকে ভালবাসি এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখি। আমীন !!!
জানি না আজকের এই পোষ্ট এ কাওকে আঘাত করলাম কিনা।যদি করে থাকি মাফ করবেন।
ভাল বা খারাপ যাই হোক আজকের এই পোষ্ট সম্পর্কে কমেন্ট করে জানাবেন।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।ধন্যবাদ

(

ইসলাম একটি পুর্নাঙ্গ জীবন বিধান। সুতরাং এখানে যেমন কোন নব্যপ্রথার স্থান নেই তেমনি নব্যপ্রথা উদ্ভাবনের কোন সুযোগ নেই। কেননা আল্লাহ তার দ্বীন কে পুর্নাঙ্গতা দান করেছেন।

আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ন করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন রূপে মনোনীত করলাম ( সূরা মায়েদা-৩)

ইসলাম এমন এক নিঁখুত জীবন ব্যবস্থা যা মানুষের জাগতিক ও পরলৌকিক সাফল্য নিশ্চিত করে। ইসলাম মানুষের পরলৌকিক সাফল্য নিশ্চিত করে জাগতিক প্রয়োজনকে উপেক্ষা না করেই।

আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তা দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান কর এবং দুনিয়া হতে তোমার অংশ ভুলিও না..(সূরা কাসাস-৭৭)

ইসলাম এমন এক জীবন ব্যবস্থা যা মানুষের কোন প্রয়োজনকে যেমন উপেক্ষা করে না , তেমনি কোন প্রয়োজনকে শরীয়া বিধানের সীমারেখা অতিক্রম করারও অনুমতি দেয় না। ইসলাম যেমন সন্ন্যাস-ব্রত সমর্থন করে না তেমনি নিখাদ বস্তুবাদও সমর্থন করে না।

এভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ এবং রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হবে ..( সূরা বাকারা -১৪৩)

মুসলিমদের মাঝে কুর'আন ও সুন্নাহ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে তারে আল্লাহ প্রদত্ত সম্মানিত জীবন (উপরে বর্ণিত আয়াত অনুযায়ী ) ত্যাগ করে গ্লানিকর জীবন বেছে নিয়েছে ? একসময়ে অর্ধ-বিশ্ব শাসনকারী মুসলিম সমাজ আজ কেন সর্বত্র নিষ্পেষিত? সঠিক পথনির্দেশনা পাবার পরও কেন আজ তারা অধঃপতিত এক জাতিতে রূপান্তরিত ? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে, রাসুলের(সা.) হাদিসে।

তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীগণের অনুকরণ করবে (হুবহু), তারা যদি (গুঁই সাপ সদৃশ প্রাণীর) গর্তে প্রবেশ করে তোমরাও তেমনি করবে । আমরা (সাহাবীগ্ণ) জিজ্ঞাসা করলাম , ‘হে আলাহর রাসুল(সা.)! এরা কি ইহুদি ও নাসারারা? ’ তিনি (সা.) বললেন, ‘তবে আর কারা?’ ” (বুখারী, মুসলিম)

এটা কোন গোপনীয় ব্যাপার নয় যে, কিছু ইহুদী ও খ্রীস্টান , মুসলিম উম্মাহর নীতি ও নৈতিকতা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সনয়, অর্থ ব্যয় করে চলেছে। তারা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে পুরোপুরি সফল হয়েছে। আল্লাহর অমোঘ নীতি , যে পরিশ্রম করবে সে ফল পাবে আর যেমন কর্ম তেমন ফল।

আমরা যদি কিছু সময় পিছনে ফিরে তাকাই, তবে দেখতে পাব, সমাজে এক সময় নীতি ও নৈতিকতার মূল্য ছিল সীমাহীন । লজ্জাশীলতা ও শুদ্ধতা ছিল সমাজের প্রথা। কোন অপরিচিত মেয়ের সাথে রাস্তায় বের হবার চেয়ে পিঠে বিশাল ভার বহন করা একটা ছেলের জন্য ছিল অধিকতর সহজ। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তা চিন্তা করারও অবকাশ ছিল না। অথচ লক্ষ্য করুন , সেই অবস্থা থেকে আজ আমরা কোথায় এসে পৌছেছি! এরই বাস্তব নমুনা “ভ্যালেন্টাইন্স ডে” যার নামকরণ করা হয়েছে “ভালবাসা দিবস” যাতে ছদ্মনামের আড়ালে সরল, পূণ্যবান , নিষ্কলঙ্ক মানুষদের বিপথগামী করা যায়। পূণ্যের মোড়কে পাপাচারের এই প্রসার শয়তানের বহু পুরনো কূটচালেরই অংশ। শয়তান একইভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল আদম(আ.) ও হাওয়া(আ.)-এর সাথে যা বর্ণিত হয়েছে কুর'আনে

সে(শয়তান) তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বলল, আমিতো তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষীদের একজন (সূরা আরাফ-১২১)

ভ্যালেন্টাইন্স ডে র ইতিহাস যতটুকূ জানতে পারা যায়, পৌত্তলিক(অগ্নি উপাসক) রোমের পৌরাণিক কাহিনীতে রোমিউলাস নামক এক ব্যক্তি ছিল। একদা রোমিউলাস নেকড়ের দুধ পান করায় অসীম শক্তি ও জ্ঞানের অধিকারী হয়ে প্রাচীন রোমের প্রতিষ্ঠা করেন। রোমানরা এই পৌরাণিক কাহিনীকে কেন্দ্র করে ১৫ই ফ্রেব্রুয়ারী উৎসব পালন করত। উৎসবের দিন তারা একটি কুকুর ও একটি পাঠা বলি দিত। দুজন শক্তিশালী যুবক বলির রক্ত সারা গায়ে মাখতো এবং পরে তা দুধ দিয়ে ধুয়ে ফেলত। অত:পর সেই দুই শক্তিশালী যুবকের নেতৃত্বে শহরে প্যারেড অনুষ্ঠিত হতো। সেই দুই যুবক তাদের হাতে থাকা চামড়ার রশি দিয়ে সম্মুখে আগত যে কাউকে আঘাত করত। রোমান নারীরা এই আঘাত আনন্দচিত্তে গ্রহণ করতো। কেননা তারা বিশ্বাস করত, এর ফলে তারা ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্ব থেকে রক্ষা পাবে, আর বন্ধ্যা মহিলারা তাদের অনুর্বরতা থেকে মুক্তি পাবে। তাদের উৎসবের আরেকটি অংশ ছিল বিবাহযোগ্যা নারীদের নাম লিখে কতগুলো কাগজের টুকরো রাখা হবে। অত:পর, যে ব্যক্তি, যে নামের টুকরো তুলত সেই মেয়েটির সাথেই পরবর্তী এক বছর কাটাতো । এই এক বছর তারা পরস্পরকে যাচাই করার সময় পেত।পরবর্তী বছরের এই একই দিনে হয় তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতো নতুবা একই নিয়মে নতুন সঙ্গী গ্রহণ করত। পরবর্তীতে রোমানরা খ্রীস্টানদের দখলে আসে এবং তাদের অনেকেই খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করে। খ্রীস্টান ধর্মযাজকরা এই অনৈতিক, অশ্লীল বিবাহ-বহির্ভূত ব্যবস্থা বাতিল করেন।

►ভ্যালেন্টাইন্স ডে◄ সম্পর্কে আরেকটি সূত্র হতে জানা যায় যে, খ্রীস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে যখন রোমানরা খ্রীস্টানদের দখলে আসে তখন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস সৈন্যদের বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ভ্যালেন্টাইন নামক একজন খ্রীস্টান ধর্মযাজক এর বিরোধিতা করেন এবং তিনি গোপনে সৈন্যদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। এই ঘটনা প্রকাশ পেলে তাকে বন্দী করা হয়। জেলে বন্দী থাকে অবস্থায় তিনি গোপনে কারারক্ষীর মেয়ের প্রেমে পড়েন কেননা খ্রীস্টান ধর্মমতে খ্রীস্টান ধর্মযাজকরা কখনো বিয়ে করতে পারেন না বা কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারেন না । পরবর্তীতে সম্রাট তাকে মুক্তির এই শর্তে দেন যে, তাকে খ্রীস্টান ধর্ম ত্যাগ করে রোমানদের পৌত্তলিক ধর্ম গ্রহণ করতে হবে এবং তার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন তার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেন এবং খ্রীস্টান ধর্মে অটুট থাকেন। অবশেষে ১৪ই ফ্রেব্রুয়ারী তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।

এই হলো ►ভ্যালেন্টাইন্স ডে◄ র ইতিহাস যা আমাদের যুব সমাজের অনেকেরই অজানা । অজ্ঞতাবশত তারা এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে উপহার, কার্ড, লাল-গোলাপ বিনিময়ের মাধ্যমে, প্রেয়সীর সাথে লাল পোষাক পরিধান করে সাক্ষাৎ করে। এমনকি এই দিনটিকে পাশ্চাত্য সমাজে এতটাই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় যে, যদি কোন ব্যক্তি এই দিনটিকে বেমালুম ভুলে যায়, তবে তাকে প্রকৃত প্রেমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

অথচ মুসলিম হিসেবে আমাদের জানা অবশ্য কর্তব্য যে, ►ভ্যালেন্টাইন্স ডে◄ কাফিরদের উদ্ভাবিত উৎসব। যা একজন মুসলিমের অবশ্য পরিত্যাজ্য।

অমুসলিমদের উৎসব মুসলিমদের সংষ্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ সুব্হানাহুতায়ালা বলেন:

►তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুপষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি.. (সূরা মায়িদাহ-৪৮)

►প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয় .. (সূরা হাজ্জ-৬৭)

►ভ্যালেন্টাইন্স ডে◄ পালন করার অর্থ হলো পৌত্তলিক রোমান এবং খ্রীস্টানদের অনুকরণ করা। অথচ কাফিরদের (তারা পৌত্তলিক হোক কিংবা আহলে কিতাব হোক) কোন প্রথা বা ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন আচরণ অনুকরণ করা হারাম যা কুর'আন, সুন্নাহ এবং ইজমা দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত।

►তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি..(সূরা আলে-ইমরান-১০৫)

►যে কেউ কোন সম্প্রদায়ের অনুকরণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বনে গণ্য হবে..( আহমদ ২/৫০, আবু দাউদ ৪০২১)

এমনকি আমরা যদি ধরে নিই যে, ►ভ্যালেন্টাইন্স ডে◄ মুসলিমদের উদ্ভাবিত একটি উৎসব, তবুও এতে যোগদানের কোন সুযোগ নেই।

► যে দ্বীনের কোন ব্যাপারে নব্যপ্রথার আবির্ভাব ঘটালো সে ধবংস প্রাপ্ত হোক..( বুখারী, মুসলিম)

আনাস বিন মালিক (রা.) কর্তৃক বর্ণিত নিম্নের হাদিস হতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ইসলামের আবির্ভাবের পর পূর্বের সকল উৎসব বাতিল হয়ে গেছে এবং কেবল মাত্র ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরকে উৎসব হিসেবে ধার্য কবা হয়েছে।

►রাসুল(সা.) যখন মদীনায় আসলেন, তখন তাদের দুটি উৎসবের দিন ছিল। তিনি(সা.) বললেন ‘এ দুটি দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এই দুই দিন উৎসব করতাম। তিনি(সা:) বললেন, ‘ আল্লাহ তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন। ইয়াওমুদ্দোহা (ঈদুল আযহা) ও ইয়াওমুল ফিতর ( ঈদুল ফিতর )..(আহমদ, আন-নাসায়ী, আবু দাউদ)

►ভ্যালেন্টাইন্স ডে◄ যা এতদ্বঞ্চলে “ভালবাসা দিবস” নামে পরিচিত, তা মূলত বিবাহ বহির্ভূত অবাধ মেলামেশার দিকে যুব সমাজকে প্রণোদনা দেয়। আর বিবাহ বহির্ভূত এসকল সম্পর্ককেই ইসলাম ব্যভিচার বলে আখ্যায়িত করে। ব্যভিচারের প্রতি আহবান শয়তানের ►ক্লাসিকাল ট্রিকগুলোর◄ একটি।

►হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্ত আছে তা থেকে তোমরা আহার কর আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু । সে তো তোমাদের নির্দেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজ করতে "...(সূরা বাকারা-১৬৮)

এছাড়া যা কিছু মানুষকে ব্যভিচারের দিকে প্রলুব্ধ করে, তার সকল পথকেই আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন:

►তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না । অবশ্যই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পন্থা ” (সূরা বনী ইসরাঈল-৩২)

►চোখের যিনা হচ্ছে তাকানো, জিহ্বার যিনা হচ্ছে কথা বলা, অন্তর তা কামনা করে এবং পরিশেষে যৌনাঙ্গ একে বাস্তবায়ন করে অথবা পরিত্যাগ করে -( বুখারী, মুসলিম)

এক শ্রেণীর লোক এই দিনটিকে “সবার জন্য ভালবাসা” এই মূলমন্ত্র বাস্তবায়নের দিন হিসেবে পালন করে। এ দিনটিকে তারা সকল ধর্মীয় বিভেদ দূর করে এক কমন প্ল্যাটফর্মে আসার জন্য বলে। কাফির, মুশরিক, মুসলিম সবাইকে সমানভাবে ভালবাসার কথা প্রচার করে থাকে।

অথচ, কাফিরদের অন্তরের প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ উন্মোচন করে দিয়েছেন এভাবে:

►তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে ত্রুটি করবে না। যা তোমাদের বিপন্ন করে তাই তারা কামনা করে।তাদের মুখে বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাদের হৃদয় যা গোপন করে, তা আরো গুরুতর। তোমাদের জন্য নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেছি, যদি তোমরা অনুধাবন কর। তোমরাই তাদেরকে ভালবাস কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না অথচ তোমরা সমস্ত কিতাবে ঈমান রাখ । আর তারা যখন তোমাদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে আমরা বিশ্বাস করি, কিন্তু তারা যখন একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে তাদের নিজেদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ কামড়ায়"। -(সূরা আলে-ইমরান: ১১৮-১১৯)

প্রকৃত ইসলামী আকীদা অনুযায়ী একজন মুসলিমও কখনো কাফিরকে ভালবাসতে পারেন না।

►তুমি (হে মুহাম্মদ!) আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় পাবে না, যারা ভালবাসে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচারিগণকে - হউক এই বিরুদ্ধাচারিরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা জ্ঞাতি-গোত্র"...(সূরা মুযাদিলা-২২)

কিন্ত তার মানে এই নয় যে, মুসলিমরা অমুসলিমদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে । বা অমুসলিমদের প্রতি কোন দয়া দেখাবে না। আসলে দয়া-মায়া এবং ভালবাসা দুটি ভিন্ন জিনিস । আমরা এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি না বিধায় এই আয়াতের ভুল অর্থ বুঝি। বরং মুসলিমদের ব্যবহার হবে সর্বোত্তম যা দেখে অমুসলিমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে।

►দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নাই এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করে নাই, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন নাই।" -(সূরা মুমতাহিনা-৮)}