হুরমতে মুসাহারাত এর শরয়ী বিধান
সমাজে এমন কিছু বিষয় প্রচলিত আছে যা আমাদের
অজান্তেই দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ করে চলেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হুরমতে মুসাহারাত।
পারিবারিক জীবনে এটি এমন একটি ভুল যার
কোনো সংশোধন নেই।
মানুষের মাঝে সম্পর্ক এবং মাহরাম আত্মীয়তা তিন ধরনের
হয়ে থাকে।
১.নসব তথা বংশীয় সম্পর্ক।
২.রেযা’আত তথা দুধ সম্পর্ক।
৩.মুসাহারাহ তথা বৈবাহিক সম্পর্ক।
বিবাহের মাধ্যমে যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাকে বলা হয় মুসাহারাত,
যেমন শশুর-শাশুরী এবং তাদের উর্ধতন-নিম্নতন
অর্থাৎ তাদের পিতা-মাতা,এবং স্ত্রীর কন্যা/স্বামীর ছেলে ইত্যাদি। এই আত্মীয়দের সাথে
সম্পৃক্ত হুরমত কে হুরমতে মুসাহারাত বলা হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’য়ালা বংশগত এবং বৈবাহিক উভয় প্রকারের আত্মীয়দের
সম্মান করার হুকুম দিয়েছেন। ইরশাদ ফরমান,
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا [الفرقان: 54]
আর তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; তারপর তিনি
তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন।
সুরা ফুরকান ৫৪
আর হুরমতে
মুসাহারাত যেমনিভাবে বিবাহের মাধ্যমে প্রমানিত হয় তেমনিভাবে ব্যভিচার দ্বারাও প্রমানিত
হয়। এটাই হানাফী,হাম্বলী এবং এক বর্ণানা মতে মালেকী মাযহাবের মতামত। আর হানাফি
মাযহাবে গ্রহণযোগ্য শর্তাবলী সহ দাওয়ায়ে যিনাহ তথা যা ব্যভিচারের দিকে আহবান করে তা
দ্বারাও হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হয়ে যায়। আর এটাই অধিকাংশ সাহাবা এবং বড় বড় তাবেয়ীনদের
অভিমত। এবং যার স্বপক্ষে কোরআন-সুন্নাহের প্রমাণাদি ও রয়েছে।
এ কারণে কোনো ব্যক্তি যদি কোনো মহিলা কে
বিবাহ করে ফেলে অথবা তার সাথে সহবাস করে, চাই তা আকদে সহীহ অথবা আকদে ফাসেদের পরই
হোক অথবা ব্যভিচার করে বা কোনো মহিলাকে কামভাবের সাথে কোন প্রতিবন্ধকতা ব্যতিরেকে
স্পর্শ করে অথবা কামভাবের সাথে তার লজ্জাস্থানের ভিতরাংশে নজর দেয় তাহলে হুরমতে
মুসাহারাত সাব্যস্ত হয়ে যাবে। এবং ব্যভিচারী পুরুষ মহিলা উভয়ের উর্ধতন-নিম্নতন
উভয়দিকে এই হুরমতের বিস্তার ঘটবে।
আল্লাহ তা’য়ালা ফরমান,
{وَلَا تَنْكِحُوا مَا نَكَحَ آبَاؤُكُمْ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاءَ سَبِيلًا} [النساء: 22]
নারীদের
মধ্যে তোমাদের পিতৃ পুরুষ যাদেরকে বিয়ে করেছে তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না ; তবে
পূর্বে যা সংঘটিত হয়েছে (সেটা ক্ষমা করা হলো) নিশ্চয় তা ছিল অশ্লীল, মারাত্মক
ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট পন্থা। সুরা নিসা ২২
আর এখানে বিবাহ দ্বারা সহবাস করা
উদ্দেশ্য,চাই তা হালালভাবে করুক বা হারাম। কারণ বিবাহের হাকিকী অর্থ হলো সহবাস,আর
আকদে নিকাহ তার রূপক অর্থ। তাই আয়াতের উদ্দেশ্য হলো যে মহিলার সাথে পিতা সহবাস
করেছে তাকে ছেলে বিবাহ করতে পারবে না।
যেমনটা বর্ণানা করেছেন ইমাম আবু বকর জাসসাস রাযি রহ.
“فثبت بذلك أن اسم النكاح حقيقة للوطء، مجاز في العقد، فوجب إذا كان هذا على ما وصفنا أن يحمل قوله تعالى: {ولا تنكحوا ما نكح آباؤكم من النساء} على الوطء، فاقتضى ذلك تحريم من وطئها أبوه من النساء عليه؛ لأنه لما ثبت أن النكاح اسم للوطء لم يختص ذلك بالمباح منه دون المحظور، كالضرب والقتل والوطء نفسه لايختص عند الإطلاق بالمباح منه”. (أحكام القرآن للجصاص (3/
51) سورۂ نساء،آیت:22، ط:داراحیاء التراث العربي)
আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন,
{وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا} [الإسراء: 32]
আর
যিনার ধারের-কাছেও যেও না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।
সুরা বনী ইসরাঈল ৩২
আবুল হাসান আত তাবারী এই আয়াতের ব্যাখ্যায়
লিখেন যে,আল্লাহ তা’য়ালা ব্যভিচার ও যা ব্যভিচারের দিকে আহবান করে উভয়টা থেকে
নিষেধ করেছেন। এবং এর কারণ বর্ণানা করা হয়েছে অশ্লীলতা । আর যেখানে নিজের পিতার
বিবাহিতা স্ত্রীকে বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানেও একই কারণ উল্লেখ করা হয়েছে
যে অশ্লীলতা।
এর দ্বারা বুঝা যায় উভয়টা হারামের দিক দিয়ে সমান সমান। যেমন তিনি
বলেন,
“قوله تعالى: (وَلا تَقْرَبُوا الزِّنى إِنَّهُ كانَ فاحِشَةً) ، الآية/ 32 يدل على تحريم الزنا، وهو الذي تعرى عن نكاح وعن شبهة نكاح. ووصف الله تعالى نكاح امرأة الأب بما وصف الزنا به، فقال تعالى: (وَلا تَنْكِحُوا ما نَكَحَ آباؤُكُمْ مِنَ النِّساءِ إِلَّا ما قَدْ سَلَفَ إِنَّهُ كانَ فاحِشَةً وَمَقْتاً وَساءَ سَبِيلًا) وذلك يدل على مساواته في التحريم، وبينا ما يعترض به عليه”.(أحكام القرآن للكيا الهراسي الشافعي(4/
258)، ط:دارالکتب العلمیہ)
হযরত আবু হানী রা.থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সা.বলেছেন যে ব্যক্তি কোনো মহিলার লজ্জাস্থান দেখে তার জন্য সে মহিলার মা এবং কন্যা হারাম হয়ে যাবে।
“عن حجاج، عن أبي هانئ، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من نظر إلى فرج امرأة، لم تحل له أمها، ولا ابنتها»”. (مصنف ابن أبي شيبة (3/ 480) کتاب النکاح، باب الرجل يقع على أم امرأته أو ابنة امرأته ما حال امرأته، برقم:16235، ط: مکتبة الرشد، ریاض)
এক ব্যক্তি রাসুল সা.কে জিজ্ঞাসা করলো হে
আল্লাহর রাসুল, জাহিলিয়াতের যুগে আমি এক মহিলার সাথে ব্যভিচার করেছি, এখন কি আমি
তার কন্যা কে বিবাহ করতে পারবো? তখন নবী করিম সা.জবাবে বললেন আমি এটা কে বৈধ মনে
করি না। এবং এটাও বৈধ নয় যে তুমি এমন মহিলাকে বিবাহ করবে যার কন্যার শরীরের এমন
স্পর্শকাতর জায়গা দেখেছো যা সাধারণ স্ত্রীর বেলায় দেখে থাকো।
“عن أبي بكر بن عبد الرحمن بن أم الحكم، أنه قال: قال رجل: يا رسول الله، إني زنيت بامرأة في الجاهلية وابنتها، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: ” لا أرى ذلك، ولايصلح ذلك: أن تنكح امرأة تطلع من ابنتها على ما اطلعت عليه منها”.
(مصنف عبد الرزاق الصنعانی (7/ 201) کتاب الطلاق، باب الرجل یزنی بأخت امرأتہ، برقم:12784، ط:المجلس العلمی، ہند)
এক
ব্যক্তি নিজের শাশুরীর সাথে ব্যভিচার করলে তার ব্যাপারে হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন
রা.বলেন তার উপর তার স্ত্রী হারাম হয়ে গিয়েছে।
“عن قتادة، عن عمران بن حصين في «الذي يزني بأم امرأته، قد حرمتا عليه جميعاً”. (مصنف عبد الرزاق الصنعانی (7/ 200) کتاب الطلاق، باب الرجل يزني بأم امرأته، وابنتها، وأختها، برقم:12776، ط:المجلس العلمي، هند)
এমনিভাবে
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.থেকে বর্ণিত আছে,যে ব্যক্তি কোনো মহিলার লজ্জাস্থান দেখে
এবং তার মেয়ের লজ্জাস্থানও দেখে তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা তার প্রতি কিয়ামতের দিন
তাকাবেন না।
“عن علقمة، عن عبد الله، قال: «لاينظر الله إلى رجل نظر إلى فرج امرأة وابنتها”.
(مصنف ابن أبي شيبة (3/ 480) کتاب النکاح، باب الرجل يقع على أم امرأته أو ابنة امرأته ما حال امرأته، برقم:16234، ط: مکتبة الرشد، ریاض)
এমনিভাবে মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ও আব্দুর রাজ্জাকে রয়েছে,
” عن قيس بن سعد، عن مجاهد، قال: «إذا قبلها أو لمسها أو نظر إلى فرجها حرمت عليه ابنتها»”. (مصنف ابن أبی شيبۃ (4/ 10) کتاب النکاح، باب ما قالوا في الرجل يقبل المرأة، تحل له ابنتها،الخ، برقم:17266، ط: مکتبة الرشد، ریاض)
” عن معمر، عن ابن طاوس، عن أبيه قال: «إذا نظر الرجل في فرج امرأة من شهوة لا تحل لابنه ولا لأبيه» ۔۔۔ عن أبي حنيفة، عن حماد، عن إبراهيم قال: «إذا قبل الرجل المرأة من شهوة، أو مسها، أو نظر إلى فرجها لم تحل لأبيه، ولا لابنه»”. (مصنف عبد الرزاق الصنعانی (6/ 278) کتاب النکاح، باب :وربائبکم، ، برقم:10831، ط:المجلس العلمی، ہند)
ফতওয়ায়ে শামীতে রয়েছে,
” (قوله: مصاهرةً) كفروع نسائه المدخول بهن، وإن نزلن، وأمهات الزوجات وجداتهن بعقد صحيح، وإن علون، وإن لم يدخل بالزوجات وتحرم موطوءات آبائه وأجداده، وإن علوا ولو بزنى والمعقودات لهم عليهن بعقد صحيح، وموطوءات أبنائه وآباء أولاده، وإن سفلوا ولو بزنى والمعقودات لهم عليهن بعقد صحيح فتح، وكذا المقبلات أو الملموسات بشهوة لأصوله أو فروعه أو من قبل أو لمس أصولهن أو فروعهن”. (حاشیہ ابن عابدین(3/ 28)، کتاب النکاح، فصل فی المحرمات، ط: سعید)
কুরআন-সুন্নাহ এবং ফুকাহায়ে কেরামের
বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হুরমতে মুসাহারাত বিবাহ,ব্যভিচার,এবং কামভাবের
সাথে স্পর্শ করা,এবং কামভাবের সাথে লজ্জাস্থানের ভিতরাংশ দেখার দ্বারা সাব্যস্ত হয়ে
যায়।
হুরমতে মুসাহারাতের এই চার সবব তথা কারণের কিছু আছে এমন যার ব্যাপারে সকল ইমামগণ
একমত পোষন করেছেন, আর কিছুর ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
১.সহীহ
বিবাহ; এরপর সর্বসম্মতিক্রমে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হয়ে যায়।
فحرمۃ المصاہرۃ تثبت بالعقدالصحیح بدون کلام(عبدالرحمن الجزیری ،الفقہ علی المذاہب الاربعۃ ،دارالکتب العلمیۃ ، بیروت ،طبع ثانی
২.সহবাস; সহীহ বিবাহের পর
সহবাসের মাধ্যমে হুরমত প্রমানিত হয়ে যায়,এবং ব্যভিচারের মাধ্যমে সহবাসের দ্বারাও
হানাফি, হাম্বলী,এবং এক বর্ণানামতে ইমাম মালেকের নিকটও হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হয়ে
যায়। আর শাফেয়ী ও মালেকী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য মতামত হলো ব্যভিচার দ্বারা হুরমত
সাব্যস্ত হয় না।
ہو:ومناط التحریم عند الحنفیۃ و الحنابلۃ الوطء حلالا کان او حراما(الموسوعۃ الفقہیۃ الکویتیۃ،وزارۃ الأوقاف والشؤن الأسلامیۃ الکویت،۱۴۲۷،۳۶/۲۱۴)۔
৩-৪.
স্পর্শ ও নজর; কামভাবের সাথে স্পর্শ এবং কামভাবের সাথে লজ্জাস্থানের ভিতরের অংশ
দেখার দ্বারা হানাফী মাযহাব অনুযায়ী হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হয়ে যাবে।
تثبت حرمۃ المصاہرۃ بالزنا والمس والنظر بدون نکاح والملک وشبہتہ لان المس والنظرسبب داع الی الوطء فیقام مقامہ احتیاطا ( الفقہ الاسلامی و ادلتہ ۹/۶۶۳۰)
#এক,সহীহ বিবাহ,বা ফাসেদ এবং বাতিল বিবাহের
পর সহবাসের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হয়ে যায়। তবে এর
জন্য নিম্নোক্ত কয়েকটি শর্ত রয়েছে,
১.সহবাসকৃতা জিবীত হতে হবে।
২.সহবাসকৃতা কামভাবের অধিকারীনী হতে হবে,বা তার বয়স কমপক্ষে ৯ বছর হতে হবে।
এবং বৃদ্ধা নারীগণও এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
৩.এমনিভাবে পুরুষও বালেগ হতে হবে অথবা সাবালেগ হতে হবে। গ্রহণযোগ্য মত
অনুযায়ী তার বয়স কমপক্ষে ১২ বছর হতে হবে।
৪.সহবাস হতে হবে সামনের দিক দিয়ে, পিছন দিক দিয়ে নয়।
یشترط فی الوطء ثلاتۃ امور ،ان تکون الموطوء ۃحیۃ و ان تکون مشتہاۃ وہی من کان سنہا تسع سنین فاکثر و الشرط الثالث ان یکون الوطء فی القبل (عبدالرحمن الجزیری ،الفقہ علی المذاہب الاربعۃ ۴/۶۲)
#দুই,স্পর্শ করার দ্বারা হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবার জন্য
কয়েকটি শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হলো
১.সরাসরি খালি গায়ে
বা এমন কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ করে, যা এতটাই পাতলা যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভব হয়।
যদি এমন মোটা কাপড় পরিধান করে থাকে যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভূত না হয়, তাহলে
নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হবে না।
ﻓﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ – ﺃﻭ ﻟﻤﺲ ) ﻭﻟﻮ ﺑﺤﺎﺋﻞ ﻻ ﻳﻤﻨﻊ ﺍﻟﺤﺮﺍﺭﺓ
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺪﻳﻦ – ( ﻗﻮﻟﻪ : ﺑﺤﺎﺋﻞ ﻻ ﻳﻤﻨﻊ ﺍﻟﺤﺮﺍﺭﺓ ) ﺃﻱ ﻭﻟﻮ ﺑﺤﺎﺋﻞ ﺇﻟﺦ ، ﻓﻠﻮ ﻛﺎﻥ ﻣﺎﻧﻌﺎ ﻻ ﺗﺜﺒﺖ ﺍﻟﺤﺮﻣﺔ ، ﻛﺬﺍ ﻓﻲ ﺃﻛﺜﺮ ﺍﻟﻜﺘﺐ ( ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﺸﺎﻣﻴﺔ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻨﻜﺎﺡ، ﻓﺼﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺎﺕ 108-107/3- )
২.আর যদি মাথার
চুলের উপর হাত লাগায় এবং মাথার উপরিভাগের চুল স্পর্শ করে তাহলে বর্ণিত হারাম
সাব্যস্ত হবে। আর যদি মাথার থেকে নিচে ঝুলে পড়া চুলে হাত লাগায়। তাহলে হারাম
সাব্যস্ত হবে না।
قال الشامی فی ردالمحتار ٩\٢٦٩
(قوله ولو لشعر علی الرأس) خرج به المسترسل؛ وظاهر ما فی الخانیة ترجیح ان مس الشعر غیر محرم وجزم فی المحیط بخلافه ورجحه فی البحر؛ وفصل فی الخلاصة فخص التحریم بما علی علی الرأس دون المسترسل..
৩.স্পর্শ করলে পুরুষ
মহিলা যেকোন একজনের উত্তেজনা অনুভুত হওয়া।
পুরুষের উত্তেজনা অনুভূত হওয়ার লক্ষণ হল গোপনাঙ্গ দাঁড়িয়ে যাওয়া, আর পূর্ব থেকে
দাঁড়িয়ে থাকলে স্পর্শ করার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া।
ﻭﻓﻰ ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ – ﻗﻮﻟﻪ ( ﺑﺸﻬﻮﺓ ) ﺍﻱ ﻭﻟﻮ ﻣﻦ ﺍﺣﺪﻫﻤﺎ ،
ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ – ﻭﺣﺪﻫﺎ ﻓﻴﻬﻤﺎ ﺗﺤﺮﻙ ﺁﻟﺘﻪ ﺃﻭ ﺯﻳﺎﺩﺗﻪ ﺑﻪ ﻳﻔﺘﻰ
ﻭﻓﻲ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻭﻧﺤﻮ ﺷﻴﺦ ﻛﺒﻴﺮ ﺗﺤﺮﻙ ﻗﻠﺒﻪ ﺃﻭ ﺯﻳﺎﺩﺗﻪ ( ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﺸﺎﻣﻴﺔ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻨﻜﺎﺡ، ﻓﺼﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺎﺕ
109-107/4- )
৪.স্পর্শ করার সময় উত্তেজিত হতে হবে। যদি স্পর্শ করার সময় কেউ
উত্তেজিত না হয়, তাহলেও নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে না। সেই সাথে স্পর্শ করার আগে বা
শেষে, হাত ছেড়ে দেওয়ার আগে বা পর যদি উত্তেজনা অনুভূত হয় তাহলেও নিষিদ্ধতার
সাব্যস্ত হবে না।
ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ – ﻭﺍﻟﻌﺒﺮﺓ ﻟﻠﺸﻬﻮﺓ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻤﺲ ﻭﺍﻟﻨﻈﺮ ﻻ ﺑﻌﺪﻫﻤﺎ
ﻭﻓﻰ ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ – ( ﻗﻮﻟﻪ : ﻭﺍﻟﻌﺒﺮﺓ ﺇﻟﺦ ) ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺘﺢ : ﻭﻗﻮﻟﻪ : ﺑﺸﻬﻮﺓ ﻓﻲ ﻣﻮﺿﻊ ﺍﻟﺤﺎﻝ ، ﻓﻴﻔﻴﺪ ﺍﺷﺘﺮﺍﻁ ﺍﻟﺸﻬﻮﺓ ﺣﺎﻝ ﺍﻟﻤﺲ ، ﻓﻠﻮ ﻣﺲ ﺑﻐﻴﺮ ﺷﻬﻮﺓ ، ﺛﻢ ﺍﺷﺘﻬﻰ ﻋﻦ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻤﺲ ﻻ ﺗﺤﺮﻡ ﻋﻠﻴﻪ ( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ -ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻨﻜﺎﺡ، ﻓﺼﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺎﺕ – 4/108 )
৫.স্পর্শ করার পর উদ্ভূত উত্তেজনা স্থির হওয়ার পূর্বেই বীর্যপাত না
হতে হবে। যদি উত্তেজনা হওয়ার সাথে সাথেই বীর্যপাত হয়ে যায়, তাহলেও নিষিদ্ধতা
সাব্যস্ত হবে না।
ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ – ﻫﺬﺍ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﻨﺰﻝ ﻓﻠﻮ ﺃﻧﺰﻝ ﻣﻊ ﻣﺲ ﺃﻭ ﻧﻈﺮ ﻓﻼ ﺣﺮﻣﺔ ﺑﻪ ﺑﻔﺘﻰ
ﻭﻓﻰ ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ – ﻗﻮﻟﻪ : ﻓﻼ ﺣﺮﻣﺔ ) ﻷﻧﻪ ﺑﺎﻹﻧﺰﺍﻝ ﺗﺒﻴﻦ ﺃﻧﻪ ﻏﻴﺮ ﻣﻔﺾ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻮﻁﺀ ﻫﺪﺍﻳﺔ .
ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻨﺎﻳﺔ : ﻭﻣﻌﻨﻰ ﻗﻮﻟﻬﻢ ﺇﻧﻪ ﻻ ﻳﻮﺟﺐ ﺍﻟﺤﺮﻣﺔ ﺑﺎﻹﻧﺰﺍﻝ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﺮﻣﺔ ﻋﻨﺪ ﺍﺑﺘﺪﺍﺀ ﺍﻟﻤﺲ ﺑﺸﻬﻮﺓ ﻛﺎﻥ ﺣﻜﻤﻬﺎ ﻣﻮﻗﻮﻓﺎ ﺇﻟﻰ ﺃﻥ ﻳﺘﺒﻴﻦ ﺑﺎﻹﻧﺰﺍﻝ ، ﻓﺈﻥ ﺃﻧﺰﻝ ﻟﻢ ﺗﺜﺒﺖ ، ﻭﺇﻻ ﺛﺒﺖ ( ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﺸﺎﻣﻴﺔ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻨﻜﺎﺡ، ﻓﺼﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺎﺕ – 4/109
৬. যদি স্পর্শকারী মহিলা হয়, আর উত্তেজনা
হওয়ার দাবি করে, আর স্বামীর এ ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয় যে, স্ত্রী সত্য বলছে, বা
স্পর্শকারী পুরুষ হয় এবং উত্তেজনার দাবি করে, তাহলেও তার সংবাদের উপর স্বামীর
প্রবল ধারণা হয় যে, লোকটি সত্য বলছে, তাহলে নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে নতুবা নয়।
কেননা স্ত্রী এ দাবি করার মাধ্যমে স্বামী থেকে বাঁচতে চাচ্ছে, তাই স্বামীর সত্যায়ন
জরুরী, তাছাড়া যদি দুই জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয় যে, স্পর্শ করার সময় উত্তেজনা ছিল
তাহলে স্বামীর সত্যায়নের কোন প্রয়োজন নেই। -ইমদাদুল ফাতওয়া-২/৩২০, হুরমতে
মুসাহারাত-১৯
৭.মহিলার বয়স ৯ বছর থেকে কম না হতে হবে। আর পুরুষের বয়স ১২ বছর থেকে
কম না হতে হবে।
ﻭﻛﺬﺍ ﺍﻟﻤﻘﺒﻼﺕ، ﺃﻭ ﺍﻟﻤﻤﺴﻮﺳﺎﺕ ﺑﺸﻬﻮﺓ ﻷﺻﻮﻟﻪ، ﺃﻭ ﻓﺮﻭﻋﻪ ( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ – 4/100 )
ﻷﻥ ﺣﺮﻣﺔ ﺍﻟﻤﺼﺎﻫﺮﺓ ﺇﺫﺍ ﺛﺒﺘﺖ ﻻ ﺗﺴﻘﻂ ﺃﺑﺪﺍ ( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ – 4/
109 //
৮.স্পর্শকৃতা মহিলা
জিবীত হতে হবে।
উপরোক্ত ৮টি শর্ত পাওয়া গেলে হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হয়ে যাবে।
এবং স্পর্শকারী পুরুষ মহিলা উভয়ের উর্ধতন-নিম্নতন উভয়দিকে এই হুরমতের বিস্তার ঘটবে।
#তিন,দৃষ্টিপাতের দ্বারা হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হওয়ার জন্য
নিম্নোক্ত শর্তগুলো প্রযোজ্য হবে।
১- দৃষ্টিপাতটি হতে হবে মহিলা পুরুষের আর পুরুষ নারীর সরাসরি শরীরের দিকে। ছবি বা
ভিডিও বা কারো অবয়বের পুতুল হলে হবে না।
২- দৃষ্টিটি নিবদ্ধ হতে হবে মহিলার লজ্জাস্থানের খানিকটা ভিতরাংশে। শুধু উপরের অংশ
দেখার দ্বারা হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে না। আর পুরুষের ক্ষেত্রে শুধু
লজ্জাস্থান দেখার দ্বারাই হুরমত সাবেত হবে।
৩- দৃষ্টি নিবদ্ধের সময় শারিরিক উত্তেজনা অনুভূত হতে হবে। পরে বা আগে হলে হবে না।
৪- যার লজ্জাস্থান দেখছে সে জীবিত হতে হবে। মৃত হলে হুরমত সাব্যস্ত হবে না।
৫- দৃষ্টি নিবদ্ধের সাথে সাথেই বীর্যপাত না হতে হবে। বীর্যপাত হয়ে গেলে হুরমত
সাব্যস্ত হবে না।
৬- মেয়ের বয়স কমপক্ষে ৯ বছর আর ছেলের বয়স কমপক্ষে ১২ বছর হতে হবে।
أخبرنا أبوحنیفة، عن حماد، عن إبراهیم، قال: إذا قبل الرجل أم أمرأته أو لمسها من شهوةٍ حرمت علیه امرأته، أخرجه محمد في الحجج ورجاله ثقات (إعلاء السنن: ۱۱/۱۳۱)
أخبرنا إسماعیل بن عیاض، حدثنا سعید بن أبی عروبة، من قیس بن سعید، عن مجاهد في الرجل یفجر بالمرأة قال: إذا نظر إلی فرجها فلا یحله له أمها ولا بنتها، أخرجه محمد في الحجج أیضًا ورجاله ثقات (إعلاء السنن: ۱۱/۱۳۲
(لا) تحرم (المنظور إلى فرجها الداخل) إذا رآه (من مرآة أو ماء) لأن المرئي مثاله (بالانعكاس) لا هو (هذا إذا كانت حية مشتهاة) ولو ماضيا (أما غيرها) يعني الميتة وصغيرة لم تشته (فلا) تثبت الحرمة بها أصلا كوطء دبر مطلقا وكما لو أفضاها لعدم تيقن كونه في الفرج ما لم تحبل منه بلا فرق بين زنا ونكاح.(رد المحتار-4/108-109
وفى الدر المختار- هذا إذا لم ينزل فلو أنزل مع مس أو نظر فلا حرمة به بفتى
وفى رد المحتار- قوله : فلا حرمة ) لأنه بالإنزال تبين أنه غير مفض إلى الوطء هداية .
قال في العناية : ومعنى قولهم إنه لا يوجب الحرمة بالإنزال أن الحرمة عند ابتداء المس بشهوة كان حكمها موقوفا إلى أن يتبين بالإنزال ، فإن أنزل لم تثبت ، وإلا ثبت (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/109
উপরোল্লিখিত ৬টি শর্ত পাওয়া গেলে দৃষ্টিপাতের দ্বারাও হুরমাতে
মুসাহারাত তথা বৈবাহিক সম্পর্কের দরূন আজীবন বিবাহ হারাম হওয়ার নীতি কার্যকর হবে
দৃষ্টিপাতকারী পুরুষ ও মহিলার মাঝে।
আর যদি কোনো একটি শর্ত না পাওয়া যায় তাহলে হুরমাতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে না। তবে
তা কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত নয়।
শরয়ী
দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো ব্যক্তি যদি নিজ কন্যার সাথে যিনা করে বা কামভাব নিয়ে
উত্তেজনার সাথে আবরণ ছাড়া স্পর্শ করে তাহলে নিজ স্ত্রী তথা ওই মেয়ের মায়ের সাথে
স্পর্শকারীর বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায় এবং স্ত্রী তার জন্যে চিরতরে
হারাম হয়ে যায়। তাই কন্যা বালেগা হবার নিকটবর্তী বা ৯ বছর হয়ে গেলে তাকে স্পর্শ
করার ক্ষেত্রে পিতার এবং ছেলে বালেগ বা ১২ বছর হয়ে গেলে তাকে স্পর্শ করার ক্ষেত্রে
মায়ের খুবই সর্তক থাকা উচিৎ। আর একই কাজ যদি সন্তানের দিক থেকে হয় তবুও পিতা মাতার
বিবাহ ভেঙ্গে পরস্পর চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। কাজেই মা-কে স্পর্শ করার ক্ষেত্রে
পুত্র ও বাবাকে স্পর্শ করার ক্ষেত্রে কন্যার খুব সতর্কতা আবশ্যক।
উপরোক্ত দুটি মাসআলার মতই শশুর কর্তৃক
পুত্রবধূ এবং শাশুড়ি কর্তৃক জামাইকে স্পর্শ করার বিধান। অর্থাৎ শর্তগুলি পাওয়া
গেলে স্বামী স্ত্রী পরস্পর হারাম হয়ে যাবে। যদি কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে
ব্যভিচারে লিপ্ত হয় অথবা কামভাব নিয়ে আবরণহীন তাকে স্পর্শ করে অথবা কামভাব সহকারে
মহিলার লজ্জাস্থানের খানিকটা ভিতরাংশে তাকায় অথবা নারী পুরুষের লজ্জাস্থানে তাকায়
তাহলে ঐ পুরুষের জন্য ওই মহিলার মা এবং মেয়ে সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যায়। আর যদি সেই
ব্যক্তি পূর্ব থেকেই ঐ মহিলার মেয়েকে বিবাহ করে থাকে, তাহলে তার সেই স্ত্রী
চিরতরের জন্য হারাম হয়ে যাবে।
হুরমতে মুসাহারার দ্বারা অটোমেটিক বৈবাহিক
সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে স্বামী স্ত্রী পরস্পর হারাম হয়ে যায়। আর এই হারামটা সারা জীবনের
জন্য বহাল থাকে। অর্থাৎ পুনরায় বিবাহের কোন উপায় আর থাকে না।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে উদ্ভূত
পরিস্থিতি থেকে বেচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।
No comments:
Post a Comment