Friday, May 10, 2019

হিম্মতে বান্দা মদদে খোদা

হিম্মতে বান্দা মদদে খোদা

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে এ মাসে উপস্থিত হয় সে যেন মাসভর রোযা রাখে। (সূরা বাক্বারা ২:১৮৫)
অসুস্থ ও মুসাফির ছাড়া প্রত্যেক বালিগ মুসলিমের উপর সারা মাস রোযা রাখা ফরয। এ শুধু মাহে রমাযানেরই বৈশিষ্ট্য। এ বিধান অন্য কোনো মাসে নেই।


তামান্না কলেজে পড়ে। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। আজ দেখলাম, দুপুরে খাবার খাচ্ছে। কিছুটা অবাক হয়ে ওর মাকে জিজ্ঞেস করলাম-
আন্টি, তামান্না রোজা নেই?
আন্টি বললেন-
ও রোজা থাকতে পারে? দেখো না কেমন শুকনা?
নাহ, বেশী অবাক হইনি। মানুষ হিসেবে এতোটা অবিবেচক নই আমি। তামান্নার দোষ নেই। বাড়ি পাশাপাশি হবার সুবাদে সেই ছোটবেলা থেকেই তো দেখছি ওকে। তবে, আমি ভেবেছিলাম অনেক দিন পেরিয়েছে, তামান্না বড় হয়েছে। এখন হয়তো পাল্টেছে সবকিছু। কিন্তু আমি ভুল ভেবেছিলাম। আসলে, পাল্টানোর ইচ্ছা না থাকলে কিছুই পাল্টায় না।
নিজে চোখে যা দেখেছি, তা তো আর ভুলে যেতে পারিনা। তামান্না ছোট থাকতে রোজা থাকার জন্য বায়না করতো। ৮-৯ বছর যখন ছিলো তখন প্রায়ই রোজা থাকার জন্য বায়না করতো। সাহরীতে ওর মা ওকে ডাক না দিলে না খেয়েই রোজা থাকতে চাইত। কিন্তু পড়ার ক্ষতি হবে তাই ওর মা কিছুতেই রোজা থাকতে দিতো না। দরকার হলে মেরে ওকে খাওয়াত। আর ছোট থেকেই শুকনো ধাঁচের হবার জন্য আরো কড়া ছিলো ওর বাবা মা। তাদের ভাষ্য, এই শরীর নিয়ে কিছুতেই রোজা রাখতে পারবে না তামান্না।
একরাতে শাওন তারাবীহ পড়ার জন্য বায়না করছিল। কিন্তু ওর মা ওকে কিছুতেই পড়তে দেয়নি বরং গালাগাল করেছিল। পরদিন ওর কোচিং এ পরীক্ষা ছিলো। ওর মা বলছিল- "কি নামাজ পড়বি তা জানি, যাতে পড়তে না হয় তাই বাহানা করছিস"
পাশের ঘর থেকে স্পষ্টই সব শুনতে পাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝে বলতাম-
আন্টি ওকে দুটো একটা করে রোজা রাখতে দেন। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
আন্টির এক কথা-
যে শুকনা শরীর, রোজা রাখবে কিভাবে? আর রোজা রাখলে তো সারাদিনের পড়া মাটি। কোচিং, প্রাইভেটে তো যাবেইনা, বাসাতেও পড়বে না।

বছর কেটেছে, মাস কেটেছে। ছোট্ট তামান্না আজ বড় হয়েছে। কিন্তু রোজায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠা আর হয়নি তার। আর এখন ছোটবেলার মত রোজা রাখার জন্য জেদও করেনা ও। কারণ ও জানে আল্লাহর ফরয বিধান রোজা রাখার চেয়েও পরীক্ষা, রেজাল্ট এগুলো বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আর তারাবীহেরও কোন আলাদা গুরুত্ব নেই ওর কাছে। যেখানে ফরয সালাতই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার সেখানে তারাবীহ তো নফল ইবাদাহ্।
আতিকও এবার ইন্টার পরীক্ষার্থী। সেই ৯ বছর বয়স থেকে রোজা করতে অভ্যস্ত সে। এখন আতিক পুরোপুরি অভ্যস্ত। তবে যখন ছোট ছিলো তখন মাঝে মাঝে মাথা ব্যথায় অস্থির হয়ে যেতো, দূর্বল হয়ে পড়ত। আমি নিজে দেখেছি- ওর মা ওকে সেদিন স্কুলে, কোচিং এ যেতে দিতনা। শুয়ে থাকতে বলত। ইফতারের সময় গরম দুধের সাথে হরলিক্স মিশিয়ে খাওয়াত। আর নরম গলায় বলতো-
এইতে বাবা, ভালো হয়ে গেছ। আর মাত্র কটা দিন। থাক, আজ পড়তে হবে না। নামাজ পড়ে এসে ঘুমিয়ে পড়। কালকে সকালে পড়ো ভাল করে।
অবশ্য, আতিকের স্বাস্থ্য ভালো। তবে ওর ছোট বোন সুমাইয়া এতো বেশী শুকনা যে তাকে ক্লাসে অনেকেই সূতা কৃমি বলে ডাকে। সুমাইয়াকেও দেখছি, সেই ক্লাস টু থেকে সব রোজা করে। এত শক্তি মেয়েটা পায় কোথা থেকে আল্লাহ্ মালুম। অবশ্য এখন বড় হয়েছে। কিন্তু শরীরের কোন পরিবর্তন হয়নি! সেই শুকনোই রয়ে গেছে। নেক আমলের প্রতি খুব ঝোঁক মেয়েটির। পুরো কোরান অর্থ সহ খতম দেয় প্রত্যেক রমজানে। রোজা রাখার পরে শরীর সামান্য দূর্বল হলে ওর মা খাবারের প্রতি একটু যত্নবান হয়।
বাচ্চারা হলো কাদামাটি। যে আকৃতিতে তাদের গড়ে তোলা হবে সেভাবেই গড়ে উঠবে। কিন্তু শক্ত হবার পরে আকৃতি পাল্টাতে চাইলে কাজের কাজ কিছুই হবেনা। বরং ভেঙ্গে যাবে।
মানুষের প্রথম বিদ্যালয় হলো মা তথা পরিবার। দুনিয়ার গুরুত্ব বাচ্চাদের মনে গেঁথে দেবে না কি মহান আল্লাহর হুকুমের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেবে সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে, ফল মিষ্টি হলে উপকার শেষপর্যন্ত আমাদেরই হবে। তাই বীজ টা বপন করার সময় সবাই যেন একটু খেয়াল রাখে।

শরয়ী ওযর ছাড়া যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত একটি রোযাও পরিত্যাগ করে সে নিকৃষ্ট পাপী। দ্বীনের মৌলিক ফরয লংঘনকারী এবং ঈমান ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে সে পরিগণিত হবে। আর এ কাজ সে রোযার যে মঙ্গল ও বরকত থেকে বঞ্চিত হবে তা কস্মিণকালেও পাবে না। এমনকি এ রোযার কাযা করে নিলেও তা ফিরে পাবে না। হাদীস শরীফে এসেছে যে ব্যক্তি কোনো ওযর বা অসুস্থতা ব্যতিরেকে রমযানের একটি রোযা পরিত্যাগ করবে সে যদি ঐ রোযার পরিবর্তে আজীবন রোযা রাখে তবুও  ঐ এক রোযার ক্ষতি পূরণ হবে না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২৩
অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, আমাদের সমাজে অনেক সবল-সুঠাম দেহের অধিকারী ব্যক্তিও অকারণে, সামান্য ছুতায় অসুস্থ হওয়ার অমূলক আশংকায় রোযা পরিত্যাগ করে। এতে তারা আখেরাতের কত বড় ক্ষতি নিজের উপর টেনে নিচ্ছে তা একটু ভেবেও দেখে না।
 আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবী নামাযকে আমাদের জন্য অপরিহার্য করেননি তবে তিনি উৎসাহিত করেছেন এবং বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রমযানের রাতে (নামাযে) দাঁড়ায় তার পূর্বকৃত গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০০৯)

হাদীস শরীফে এসেছে- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উঠে আমীন, আমীন, আমীন বললেন। তাঁকে বলা হল, হে রাসূল! আপনি তো এরূপ করতেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জিবরাঈল আমাকে বললেন, ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমীন। অতঃপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমযান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমীন। জিবরাঈল আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার নিকট আমার নাম আলোচিত হল অথচ সে আমার উপর দুরূদ পড়ল না। আমি বললাম, আমীন। -আল আদাবুল মুফরাদ : ২২৫, হাদীস ৬৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৯০৮
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রমযানের হক আদায় করার তওফীক দান করুন এবং নবীজীর অভিসম্পাৎ থেকে রক্ষা করুন। আমীন!
collected &edited [Courtesy জাকিয়া সিদ্দিকী, মাসিক আলকাউসার]

No comments:

Post a Comment