জাপানে নবাগতদের জন্য
রচনা ও সম্পাদনাঃ ইমরান নুর মানিক
(দোয়ার দরখাস্ত রইল)
ক)আসার আগের নানাবিধ প্রস্তুতি গ্রহণ করার দিকনির্দেশনা
১। বিমানের টিকিট অনুযায়ী (পারলে লাগেজ ওজন করে) মালামাল লাগেজে ভর্তি করা।
২। হাত ব্যাগও মালামাল ভর্তির পর ওজন করে নেয়া আবশ্যক।
৩। কমপক্ষে ১,৫০,০০ থেকে ২,০০,০০০ ইয়েনের ব্যবস্থা করা।
- ইয়েন বাংলাদেশ থেকে কিনে আনতে পারে ( মানি একচেঞ্জ থেকে কিনতে হবে)
- অথবা জাপানে থাকা পরিচিত কারও মাধ্যমে ( তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলা টাকা দেশে প্রদান করে ) জাপানে ইয়েন বুঝে নিতে পারেন।
-মুদ্রা বিনিময় হার Payforex, JME remit , JRF Remit থেকে দেখে নিতে পারেন।
৪। এই ইয়েন আপনি নগদ আপনার সাথে (লাগেজে দিবেন না) বিমানে বহন করতে পারবেন।
৫। যেই বিমানে আসবেন, তাদের সাথে অবশ্যই ইমেলে কন্টাক্ট করে আপনার জন্য হালাল খাবারের ব্যবস্থা করে নিবেন।
৬। বিমান ছাড়ার কমপক্ষে ৪/৫ ঘন্টা আগেই বিমান বন্দরে টিকিটে উল্লেখিত সময়ে নির্ধারিত টার্মিনাল দিয়ে প্রবেশ করবেন। প্রথমেই আপনার লাগেজ, ব্যাগ ইত্যাদি কনভেয়ার বেল্টে দিয়ে চেক করা হবে ।
খ) বিমান বন্দর
৭। আপনার মোবাইলে যেন যথেষ্ট পরিমানে চার্জ থাকে, এ জন্য দরকার হলে পাওয়ার ব্যঙ্ক সাথে নিবেন।
৮। বিমানে, জাপানের বৈদ্যুতিক রেল এবং বিশ্বরোডের বাসে চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা আছে । এজন্য এদেশের চার্জার ক্যাবল এবং এডাপ্টার সাথে আনতে হবে।
৯। বিমান বন্দরে ঢোকার পর ট্রলি নিয়ে তাতে আপনার লাগেজ ও ব্যাগ বহন করতে পারেন। ট্রলির হাতলে চাপ দিয়ে চালাতে হয়।
১০। এরপর আপনার এয়ারলাইনের কাউন্টার খুজে টিকিট চেক করে নিবেন।এখান থেকে মুল টিকিট পাবেন। যেটা আপনার বোর্ডিং পাস হিসেবে গণ্য হবে।
১১। অতঃপর আপনার লাগেজ ওজন করে বুকিংএ দিবেন। লাগেজের সাথে হাত ব্যাগ ও মাপতে পারে। লাগেজে এবং আপনার পাসপোর্টে অবশ্যই বুকিং স্লিপ লাগাইয়ে দিবে।
১২। এরপর আপনার ইমিগ্রেশন পুলিশ বক্সে চেকিং সম্পাদন করতে হবে। .
১৩।যে সমস্ত কাগজপত্র বিমান বন্দরে চেক করে সেগুলি আর অন্যান্য ডকুমেন্ট এর কপি সাথে রাখবেন। এখানে কোন কাগজ নিলে সচরাচর ফেরিত দেয়া হয় না। তবে হাতে সময় থাকলে ফটোকপি করতে পারবেন। ভেতরে ফটোকপি মেশিন আছে।
১৪। ফাইনাল চেকিং রুমে বিমানে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এজন্য এই রুমে ঢোকার আগেই অজু করে নামাজের ওয়াক্ত হলে নামাজ পরে নিবেন। আর হাত ব্যাগে ছোট জায়নামাজ রাখবেন, যদি বাইরে থেকে পড়া না যায় তাহলে রুমেই মধ্যেই পড়ে নিবেন।
গ) বিমান ও অবতরণ
১। বিমানে ওঠার আগে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে।
২। সিট দেখে বসবেন। ট্রানজিটের পর নতুন বিমানেও সিট দেখে বসবেন।
৩। খাবার দেয়ার সময় জুস, মদ ইত্যাদি ফ্রি দেয়। সর্বাবস্থায় হারাম বর্জন করতে হবে। বিশেষ করে গোস্ত, জুস আর দুগ্ধজাত খাবার দিলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। টকিট কাটার সময়েই হালাল মিলের জন্য রেজিস্ট্রেশন করবেন।
৬। আপনি কি জন্য জাপানে আসলেন জিজ্ঞেস করবে, আর Admission certificate দেখতে চাইতে পারে।
৭। এখান কার কাজ শেষ হলে, আপনার লাগেজ সংগ্রহ করবেন। ঘ) কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছান
১। সবচেয়ে ভাল হয় , দেশ থেকেই কে, কিভাবে , কার সাহায্যে গন্তব্যে পৌঁছাবেন সেটা ঠিক করে আসা। জাপানি ভাষা জান থাকলে অবশ্য ভিন্ন কথা।
২। বিমান বন্দর থেকে রেল/ বাস স্টেশনে গিয়ে টিকিট কাটতে হবে। দ্রুত পৌঁছার জন্য বৈদ্যুতিক ট্রেনে যাওয়াই সবচেয়ে ভাল। আপনার মোবাইলে ট্রেনের পুরা নেভিগেশন দেখে গন্তব্য ইস্টেশনে নামবেন। ট্রেনের মধ্যে ফ্রি ওয়াই ফাই থাকে।
৩। কেউ যদি আপনাকে নিতে আসে তাহলে আর কোন সমস্যা নেই। গন্তব্যে পৌঁছার আগে ট্রেনের মধ্যে নাস্তা করতে পারেন।
৪। গন্তব্যে পৌঁছার পর আপনার থাকার জায়গা বুঝে নিতে হবে। এসময় ভাড়া বাসা হলে, কি মানি, এক মাসের ভাড়া, ইন্স্যুরেন্সের টাকা নগদ পরিশোধ করতে হতে পারে। ( যার পরিমাণ সিঙ্গেল রুমের জন্য প্রায় ৮০,০০০ ইয়েন হতে পারে)
৫। রুমে ঢুকে, লক, ট্যাপ,বাথ্রুমের গরম-ঠান্ডা পানির প্রবাহ, লাইট, এসি ঠিক আছে কিনা দেখে নিন।
ঙ)প্রথমিক প্রয়োজন
এ জন্য লাগবে
-রান্না সম্পর্কে প্রথামিক ধারনা থাকা দরকার, তা-নাহলে হালাল খাবারের জন্য বহু কষ্ট হয়ে যাবে। ( প্রথমদিকে হয়ত দু এক বেলা দাওয়াত পেতে পারেন) চ) কোথায় পাবেন?
ছ) যানবাহন
১। চলার জন্য কমপক্ষে একটা সাইকেল লাগবে।যদি স্কুটি, মটরসাইকেল, প্রাইভেট কার চালানোর ইচ্ছা থাকে তাহলে , বিমানে উঠার কমপক্ষে ৪ মাস আগেই দেশের লাইসেন্স পেতে হবে।
২। এখানে আসার আগেই ইন্টারন্যাশনাল লাইসেন্স আনতে হবে।৩। এখানে এসে যদি পরীক্ষায় পাশ করেন তাহলে এদেশের লাইসেন্স পাবেন।
৫। সাইকেল রাস্তার বাম পাশে চলে, রাতের বেলায় অবশ্যই আলো জালায়ে রাখতে হবে, আর সবসময় মনে রাখতে হবে যে , ফুটপাথের তথা পায়ে হেতে চলা ব্যক্তির অগ্রাধিকার সবচেয়ে বেশি।
৬। বাসে চলাচলের সময় ঢোকার সময়ই টোকেন টেনে নিবেন, তারপর টোকেন অনুযায়ী ভাড়া দিবেন। অথাবা বাস/ট্রেন পাস বানিয়ে নিবেন।
ঝ)পরিবারকে দ্রুত আনাতে চাইলে
৩। এখানে আসার পর আপানার ব্যাংক একাউন্ট যত দ্রুত হবে, তত তাড়াতাড়ি মোবাইল নিতে পারবেন। ৬ মাসের আগে rakuten ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন না করাই ভাল। আর ৬ মাসের আগে, JRF Remit, Payforex থেকে সরাসরি টাকা পাঠাতে পারবেন, জমা করে নয়।
৪। যখন ওয়ার্ড অফিসে যাবেন দ্রুত My number Card করে ফেলবেন। অনেক সময় এই কার্ডের সৌজন্যে প্রায় ২০,০০০ ইয়েন পাওয়া যায়। আর ফ্যামেলি আনার জন্য জুমিন হ তুলতে গেলে এই কার্ড লাগবে।
ভালভাবে ০৩,০৪ বা ০৫ বছর অতিক্রান্ত করার জন্য আপনি নিজেই কিছুদিনের মধ্যে অনেক কিছুই শিখে যাবেন, এর পাশাআশি কিছু বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-
১। কখনই বাংগালি অবাংগালি কারও নিন্দা, দোষচর্চা তথা গীবত শুনবেন না আর করবেনও না।
২। যদি কেউ অপছন্দনীয় আচরণ যেমন আপনার সামনে অন্যের দোষচর্চা , অযাচিত কথা কাজ ইত্যাদি করে তাহলে পারলে তাকে সংশধন করান নইলে স্রেফ দূরত্ব বজায় রেখে চলুন।
৩। জাপানি কারও কাছে অন্য জাপানি কিংবা বাংগালির খারাপ কোন বিষয় উল্লেখ না করা বিশেষ করে নিজেদের মধ্যে যে সকল দন্দ সেগুলির ব্যাপারে তাদের না জানানো।
৪। যেখানে আপনার কাজ করা লাগবে , সেখানে বস সম্পর্কে কোন নেতিবাচক কথা কোন জাপানিকে না বলা।
৫। রমযান মাসে সবাই একসাথে কাজ শেষ করা। বসকে ঝুশি করতে গিয়ে অতিরিক্ত কাজ করে অন্যের ধর্ম পালনে অসুবিধা সৃষ্টি না করা।
৬। এদেশীয় মাছ খাওয়ার অভ্যাস করা তাহলে গোস্তের প্রতি আগ্রহ কম থাকবে। ভেলর ( শনি/রবিবার সকাল ০৯ টার দিকে গিয়ে মাছ কিনে কেটে নিতে পারবেন) মম এ বড় মাছ, আর এয়ন বিগে চিংড়ি ও ছোট মাছ পেবেন।
৮। অনেক সময় ছাড় পাবেন ( ১০,২০,৩০,৫০%) ছাড়ের স্টিকার চেনা ( সাধরন্ত হালকা লাল রঙের স্টিকার বারকোডের কিংবা প্যাকেটের গায়ে লাগান থাকে।
৯। ট্রান্সলেটর হিসেবে গুগলের পাশাআশি জাপানে যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং বেশ ভাল কাজ করে Deepl Translator কাজেই এটা ব্যবহার করাই ভাল।
১০। প্রথমে আপনার বডি ক্লক ঠিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। ফলে খুমের শিডিউল হয়ত এলোমেলো হয়ে যাবে। কিছুদিন পরেই শরীর এটা মানিয়ে নিবে।
ঞ)মুসলমান হলে অবশ্যই ঈমান রক্ষা করা !
মুসলিম হিসেবে ঈমান টিকিয়ে রাখার জন্য হালাল খাবারের ক্ষেত্রে কোন আপোষ করা যাবে না। জুম্মার নামাজ, মুসল্লা ( মসজিদ) কেন্দ্রিক উঠাবসা করলে ভাল, নইলে কুছুদিন পর থেকেই নিজের জীবন হতে ইসলাম বিদায় নেয়া শুরু করবে। পরবর্তী বংশধর আল্লাহ না করুন, নাস্তিক হবার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।
(বলা হয় অমুসলিম দেশে বসবাসরত মুসলিম পরিবারে জন্মানো সন্তানেরা প্রতি ৪০ বছরে ২৫% হারে নাস্তিক হয়ে যায়) ।
এটা বড়ই দুঃখজনক যে, ঈমানের দৌলত যা বংশপরম্পরায় লাভ হয়েছিল সেটা পরবর্তী প্রজন্ম থেকে হারিয়ে চিরিস্থায়ী জাহান্নামের বাসিন্দা হয়ে গেল। সুতরাং অমুসলিম দেশে আসার জন্য প্রয়োজনীয় মাসলা মাসায়েল যেমন; হালাল-হারাম খাদ্য ও উপার্জন সম্পর্কে যথা সম্ভব বিস্তারিত জেনে জায়েন।