Friday, December 10, 2021

এ ধরনের আচরণ থেকে বেঁচে থাকতে হবে:মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

শ্রুতিলিখনঃ Mohammad Hossain 
মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক হাফি. লেখেন,

আমাদেরকে এ ধরনের আচরণ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কয়েকটি আচরণ এখানে লেখা হল,
ক. বড়দের মজলিসে তাদের মধ্যকার কথাবার্তায় কিংবা হাসাহাসিতে শরীক হয়ে যাওয়া।
খ. বড়দের সাথে কথা বলার সময় হাত নাড়ানো।
গ. বড়দের সাথে কথা বলার সময় প্রশ্ন উত্তরের পন্থা অবলম্বন করা। যেভাবে বক্তাগণ ওয়াজে নিজেরা কিছু বলেন, কিছু শ্রোতাদের উপর ছেড়ে দেন। অথবা দরসে উসত্মাযগণ কিছু নিজেরা বলেন, কিছু ছাত্রদেরকে দিয়ে বলান।


ঘ. কাপড়-চোপড় ও সামানপত্র এলোমেলোভাবে রাখা।
ঙ. জুতো অগোছালোভাবে রাখা।
চ. জুতো হাত থেকে মাটিতে রাখার সময় উপর থেকে ছেড়ে দেওয়া।
ছ. ভেতরে গেঞ্জি, ফতুয়া এ জাতীয় কোনো পোষাক না পরে শুধু সাদা ও পাতলা জামা পরে চলাফেরা করা, বা বাইরে বের হওয়া বা দরসে যাওয়া ইত্যাদি।
জ. শুধু সেলোয়ার পরে কামরায় অথবা বারান্দায় হাঁটাচলা করা।
ঝ. শুধু লুঙ্গি পরিধান করা অবস্থায় দরজা বা জানালার আলোর সামনে দাড়ানো।


ঞ. অনেকক্ষণ বসে থাকার পর জামা-কাপড় ঠিক না করেই চলাফেরা শুরু করা। বিশেষভাবে যখন কাপড় শরীরের বিভিন্ন অংশে লেপ্টে থাকে।
ট. খুব প্রয়োজন ব্যতীত শরীরের নিম্নাংশের কাপড় ধরে হাঁটা এবং অন্যের সামনে এধরনের স্থান চুলকানো।
ঠ. অন্যের সামনে নাক-কান খুঁচিয়ে ময়লা বের করা ।
ড. লাউড স্পীকারের আওয়াজ যাচাই করার জন্যে তাতে জোরে ফুঁকতে থাকা। অথচ ফুঁকা ছাড়া আঙুলে টোকা দিয়েও যাচাই করা সম্ভব।
ঢ. ডাল ইত্যাদি তরল খাবার খেতে শ্রুতিকটু শব্দ করা। বিশেষত ইজতেমায়ী দসত্মরখানে। বিশেষভাবে যখন দসত্মরখানে আমি নতুন কিংবা দসত্মরখানে কোনো মেহমান থাকেন।
ণ. কাপড় পাল্টানোর পর পরিহিত কাপড়টি ওভাবে ফেলে রাখা।
ত. পুকুরে অথবা হাউজে (যেখানে একসাথে অনেক মানুষ গোসল করে) গোসলের সময় লুঙ্গির উপর রুমাল, তোয়ালে অথবা গামছা ইত্যাদি না পেঁচানো। বিশেষভাবে যখন লুঙ্গি পাতলা বা সাদা হয়।
থ. হাম্মাম বা ইসেত্মঞ্জাখানা ব্যবহারের পর উপরে নীচে অথবা যে অংশে পানি থাকে সে অংশে নাপাকি অথবা ছিটা নাপাকি অথবা ব্যবহৃত কুলুখ (মাটির ঢেলা, কাপড় অথবা টয়লেট পেপার- মানাদিলুল হাম্মাম-)ফেলে আসা।
এধরনের নানা দৃষ্টিকটু বা শ্রুতিকটু আচরণ যা অন্যের থেকে প্রকাশ পেলে একজন উন্নত রুচির অধিকারী মানুষের তো বটেই, একজন মোটামুটি রুচিবোধসম্পন্ন লোকেরও খারাপ লাগে তা-ই যখন নিজে করা হয় তখন খেয়ালই হয় না যে আমিও এমন অরুচিকর কাজ করছি। অথচ এটা একেবারে স্বাভাবিক, যা আমার কাছে অপসন্দনীয় তা অন্যের কাছে আমার চেয়ে বেশী অপসন্দনীয় হবে।

السعيد من وعظ بغيره ‘ভাগ্যবান সেই যে অন্যের অবস্থা দেখে উপদেশ গ্রহণ করে’ -এ প্রবাদের ভেতর এটাও শামিল যে মানুষ এধরনের স্বতসিদ্ধ বিষয়গুলোতে অন্যকে দেখে সবক হাসিল করবে।
আরো একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। সেলোয়ারের উপর জামা শুধু সৌন্দর্যের জন্যে পরা হয় না; বরং জামার এক উদ্দেশ্য এটাও যে, এর মাধ্যমে সতর ভালোভাবে ঢাকা থাকে। তাই কোনো মজলিসে বসার সময় জামাকে গুটিয়ে বা যেনতেনভাবে ফেলে রাখা উচিত নয়; বরং এমনভাবে রাখা উচিত যাতে সতর ভালোভাবে ঢাকার মাকসাদ হাসিল হয় । হাঁ, বসার অবস্থাভেদে জামা রাখার অবস্থাও বিভিন্ন হবে। অনেক সময় জামা সরে যাওয়ার কারণে অথবা না, মুনাসিবভাবে বসার কারণে অপ্রীতিকর দৃশ্য সামনে চলে আসে। এদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

Friday, November 19, 2021

Monzil (মঞ্জিল )

 মঞ্জিল 





হাই রেজুলুশন পিডিএফ  Link 01    Link 02     Link 03     Link 04
নিম্ন রেজুলু্নের পিডিএফ  Link 01    Link 02     Link 03     Link 04



Wednesday, August 25, 2021

কাবিননামায় ১৮ নং ঘরে কি লিখবেন?

 কাবিননামায় যে বিষয়টি না লিখলে বর-কনে উভয়েই বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।

বিবাহের কাবিননামার মধ্যে ১৮ নং একটি কলাম রয়েছে। যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই কলামটি সম্পর্কে অনেকেই জানেনা আবার অনেকে জেনেও তেমন গুরুত্ব দেয় না। অথচ কলামটি পূরণ না করলে বরপক্ষ ও কনেপক্ষ উভয়ই, বিশেষ করে বরপক্ষ খুব ঝামেলায় পড়েন।
কলামটি খালি রাখলে যে ঝামেলা হয়;
মেয়েরা যেহেতু কিছুটা অভিমানী থাকে, ধৈর্য এবং বুদ্ধি কম থাকে, তাই কখনো যদি দুজনের মাঝে কোনভাবে হালকা মনোমালিন্য হয়, তখন কনে সোজা চলে যায় কাজী সাহেবের কাছে। বলে; “আমার ঝামেলাটা মিটিয়ে দিন। কাজী সাহেব মোটা অংকের টাকা নেয়ার জন্য ১৮ নং এই কলামটি সম্পর্কে আগে থেকে কাউকে অবহিত করে না। যখন কনে মোটা অঙ্কের টাকা দেয় তখন কাজী সাহেব লিখে দেয় “ফাতেমাকে তালাক দেওয়ার অধিকার প্রদান করা হলো”।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল; যেহেতু বর এ কলামটি পূরণ করেনি, কাজী পূরণ করেছে। তাই কাজী সাহেবের পূরণ করার দ্বারা মহিলা তালাকের অধিকার পাবে না। এমতাবস্থায় সে নিজেকে তালাক দিলে ইসলামের দৃষ্টিতে তালাকও পতিত হবে না। ওদিকে সরকারিভাবে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে কারণ সরকার দেখবে না কলামটি কে পূরণ করেছে।
মহিলা এ পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সরকারিভাবে সে তার স্বামী থেকে পরিত্রাণ পেলেও ইসলামের দৃষ্টিতে সে তার ঐ স্বামীরই থেকে যাবে, কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে সেটা ইসলামে যেনা ব্যভিচার হিসেবেই গণ্য করবে। সন্তান হলে জারজ সন্তান হিসেবে লালিত পালিত হবে।
আর যারা পূরণ করেন তারাও যথাযথ শব্দ ব্যবহার করতে না পারায় বিপদমুক্ত হতে পারেন না। আবার অনেকে লিখে দেয় “আমি ফাতেমাকে তালাকের অধিকার দিলাম না”। এটা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে খুব ঝামেলার সৃষ্টি হয়। বর যখন স্বাক্ষর ছাড়া অন্য কিছু লিখে তখন সবাই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখে। আর তখনই শুরু হয় বাকবিতন্ডা।
তাই বিষয়টি সমাধানের জন্য হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহঃ তার লিখিত আল-হিলাতুন্নাজেযাহ কিতাবে যথাযথ শব্দ প্রয়োগে এমনভাবে লিখতে বলেছেন যা উভয় পক্ষের জন্য উপকারী।
১৮ নং কলামে লেখা আছে; স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দিবে কিনা? এরপর কিছু জায়গা ফাঁকা রয়েছে। সেখানে কনের নাম উল্লেখ করে যা লিখতে হবে তা নিন্মরুপ;
“বিবাহের পরে আমি যদি একেবারে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই, অতিরিক্ত নির্যাতন করি, বা একেবারেই ভাত-কাপড় না দেই বা পুরাপুরি পাগল হয়ে যাই বা পুরুষত্বহীন হই তখন মোসাম্মাৎ ফাতেমা প্রতি-ঘটনার তিন দিনের মধ্যে, তার নির্ভরযোগ্য দুজন পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে নিজের উপর এক তালাকে বায়েন নিতে পারবে”।
যে শর্তগুলো এখানে দেওয়া হয়েছে তার কোনো একটি ভঙ্গ হলে কনে নিজের উপরে তালাক নিতে পারবে। আর মহিলারা সাধারণত যখন রাগ হয় তখন পরবর্তীতে কি হবে সেটা না ভেবেই একটা কিছু করে ফেলে। এজন্য শরীয়ত তাদেরকে তালাকের অধিকার দেয়নি। যেমন বাচ্চাদের হাতে কেউ কাচের পাত্র দেয় না। কারণ সে তার গুরুত্ব না বুঝে যেকোনো মুহূর্তে ভেঙ্গে দিতে পারে। তদ্রূপ মহিলারাও যখন রাগ হবে তখন সে তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে দ্রুত তালাক নিয়ে নেবে।
সুতরাং অনেকগুলো বিষয় চিন্তা করে উপরোক্ত লেখাটি লেখা হয়েছে। যা গভীর ভাবে লক্ষণীয়। লেখার মধ্যে কোন রকম ব্যতিক্রম হলে ঝামেলা তৈরি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
উক্ত লেখার মধ্যে “আমি যদি একেবারে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই” বাক্যে
“একেবারে” শব্দটি না থাকলে স্বামী যদি স্ত্রীর অজান্তে একদিন বা দুদিন কোথাও থাকে। তাহলে স্বামী নিরুদ্দেশ হয়েছে অজুহাতে, নিজের উপর তালাক নিয়ে নিতে পারবে। অথচ এটাকে নিরুদ্দেশ বলা চলেনা।
“যদি অতিরিক্ত নির্যাতন করি” বাক্যে অতিরিক্ত শব্দটি প্রয়োগ না করা হয় তাহলে কোনদিন কখনো একটি কটু কথা বা একটি চড়-থাপ্পড় এর উপর ভিত্তি করে নিজের উপর তালাক নিয়ে নিতে পারবে।
“একেবারেই ভাত-কাপড় না দেই” বাক্যে একেবারে শব্দটি ব্যবহার না করা হয় তাহলে কোনদিন কখনো যদি পছন্দের তালিকায় একটি মাত্র কাপড় না দেয়া হয় বা কোন কারণে কোন এক ওয়াক্ত ভাত না খেয়ে থাকতে হয় তাহলে মহিলা নিজের উপর তালাক নিয়ে নিতে পারবে।
“প্রতি ঘটনার তিন দিনের মধ্যে” কথাটা না লিখলে কোন একদিনের কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোন সময় তালাক নিয়ে নিতে পারবে। যেমন কেউ তার স্ত্রীকে একটি থাপ্পর দিলো কিন্তু স্ত্রী সেসময় কিছুই করলো না। দু-চার বছর পর যখন এ স্বামীর কাছে থাকতে মন চাচ্ছে না তখন সে ঐ থাপ্পরের কথা স্মরণ করে তালাক নিতে পারবে। অথচ তিন দিনের কথা উল্লেখ থাকলে পারবেনা।
“দুইজন নির্ভরযোগ্য অভিভাবক এর অনুমতিক্রমে” কথাটি বলা হয়েছে তার কারণ; শুধু মেয়েকে অধিকার দিলে সে রাগের মাথায় কোন চিন্তা না করে তালাক নিয়ে নিবে। অথচ তার অভিভাবক বিষয়টি ভালো-মন্দ চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিবে।
“এক তালাক নিতে পারবে” কথা বলার কারণ হলো; যদি এক না বলে শুধু “তালাক” নিতে পারবে বলে।
তাহলে মহিলা তিন তালাক নিতে পারবে। তাই সে তিন তালাক নিয়ে নিলে পরবর্তিতে আর ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকবেনা। এমনকি অন্য এক জায়গায় বিবাহ হওয়ার পর সে না ছাড়লে বিবাহ করারও সুযোগ থাকবে না। আর যদি এক তালাক লেখা থাকে, আর মহিলা এক তালাক নিয়ে নেয় তাহলে সে সুযোগ থাকবে।
সুতরাং আমাদের উচিত হবে বিবাহের আগেই বিষয় ভালো করে শিখে কাবিননামার ১৮ নং কলাম যথাযথভাবে পূরণ করা। আল্লাহ আসান করেন।
আমিন আমিন






Monday, August 2, 2021

Exam Strategy with IMRAN NUR

How to get the best marks while answering the questions.....




PDF FILE (One page): Link-01       Link-02        Link-03
PDF FILE ( Slide version): Link-01       Link-02        Link-03



Watch the full video Lecture on Exam strategy with Imran Nur



Sunday, July 18, 2021

গোস্ত বণ্টন নিয়ে প্রচলিত দুটি জিজ্ঞাসার জবাব

 গোস্ত বণ্টন নিয়ে প্রচলিত দুটি জিজ্ঞাসার জবাব


উৎসঃ মাসিক আলকাউসার (গবেষণামূলক উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর মুখপত্র)
হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা – ১৩১৩, ফোন: ৮০৫০৪১৮, ফ্যাক্স: ৮০৩৪৫০৮, মোবাইল: ০১৯৮৪ ৯৯ ৮৮ ২২, ইমেইল: info@alkawsar.com

প্রশ্ন:

আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে, কুরবানীর গোশত তিনভাগে বণ্টন করা জরুরি এবং এতে সামান্য ত্রুটি করলেও কুরবানী হবে না। অথচ অনেক সময় এমন হয়, বিশেষ করে পরিবারের লোকজন বেশি হলে এবং অভাবী হলে নিজের অংশ থেকে এক ভাগ রেখে দুই ভাগ দিয়ে দিলে সে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে তৃপ্তির সাথে খেতেই পারে না। আবার দূরের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে দাওয়াত করে খাওয়াতে বা তাদের জন্য কিছু গোশত পাঠাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই প্রশ্ন হল, এভাবে প্রথমেই গোশত মেপে মেপে তিনভাগ করে এক ভাগ রেখে বাকি দুই ভাগ বিলিয়ে দেওয়া কতটুকু জরুরি? এতে কমবেশি করার হুকুম কী? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানতে চাই

 

উত্তর:

কুরবানী করা এবং কুরবানীর গোশত দান করা ভিন্ন ভিন্ন দুটি আমল। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইখলাসের সাথে পশু জবাই করার দ্বারাই কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। আর কুরবানীকারীর জন্য তার কুরবানীর গোশতের ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা হল, সে নিজ পরিবার-পরিজনকে নিয়ে খাবে এবং পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, যারা কুরবানীর সামর্থ্য রাখে না তা দেরও দান করবে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ... (কুরবানীর গোশত) তোমরা খাও, জমা করে রাখো এবং (গরীব-অসহায়দেরও) দান করো। হাদীস : ১৯৭১

অন্য বর্ণনায় আছে, তোমরা খাবে এবং অন্যদেরও খাওয়াবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৭৩

তবে দানের ব্যাপারে কুরবানীকারীর উপর শরীয়ত কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করেনি;বরং প্রত্যেককে তার অবস্থা অনুপাতে দান করতে বলা হয়েছে। অবশ্য সামর্থ্যবানদের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় উত্তম হল, মোটামুটি তিন ভাগ করে এক অংশ গরিব-মিসকিন অসহায়দেরকে দান করা, এক অংশ গরীব আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া। আর এক অংশ নিজের জন্য রাখা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কুরবানীর গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার-পরিজনকে দিতেন। আরেক ভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং এক ভাগ ভিক্ষুক অসহায়দের দান করতেন। আল মুগনী ১৩/৩৭৯

উল্লেখ্য, বণ্টন উত্তম জরুরি বা আবশ্যক নয়। তেমনি একেবারে ওজন করে তিন ভাগ করাও আবশ্যক নয়। বরং কুরবানীকারীর জন্য এতে তারতম্য করার অবকাশ আছে

আরো উল্লেখ্য যে, এটি যেহেতু একটি মুস্তাহাব আমল তাই সামর্থ্যবানদের এর উপর আমল করা উচিত। আর কারো পরিবারের সদস্য বেশি হলে কিংবা নিজেদের প্রয়োজন বেশি থাকলে সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের প্রয়োজন পরিমাণ গোশত রাখতে পারবে, এটা তাদের জন্য অনুত্তম হবে না

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৩৭; বযলুল মাজহূদ ১৩/৪৩; রদ্দুল মুহতার /৩২৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক /৪৮৬; ইলাউস সুনান ১৭/২৬২

*****

প্রশ্ন

আমি একজন আমেরিকা প্রবাসী। দীর্ঘদিন যাবত সপরিবারে এখানে আছি। কুরবানী দেশেই করে থাকি। এর একটা কারণ হল আমরা জানি যে, কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করতে হয়। এক ভাগ নিজের, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের আর এক ভাগ মিসকিনদের। আর মিসকিনদের অংশ কুরবানীদাতারা কেউ খেতে পারবে না। যদি খেতে হয় তাহলে পরিমাণ গোশতের মূল্য সদকা করে দিতে হবে

উল্লেখ্য, আমাদের এখানে গরীবের অংশ গ্রহণ করার মতো কেউ নেই, তাই আমি এখানে কুরবানী না করে দেশে কুরবানী করে থাকি

একজন আলেমের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কুরবানী তিন ভাগে ভাগ করতেন। আবার আরেক হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যা ইচ্ছা দান কর, যা ইচ্ছা নিজেরা খাও। আমার জানার বিষয় হল-

) তিন ভাগ করাটা কি বাধ্যতামূলক?

) যদি বাধ্যতামূলক হয় তাহলে মিসকিনদের অংশের হুকুম কী?

) যদি বাধ্যতামূলক না হয় তাহলে কুরবানীদাতা কি মিসকীনদের অংশ খেতে পারবেন?

) আর উপরে উল্লেখিত উভয় হাদীসই কি সহীহ? সহীহ হলে দুই হাদীসের মাঝে সমন্বয় হবে কীভাবে?

আমার মতো এখানের অনেকেরই একই প্রশ্ন। দলীলসহ জানালে কৃতজ্ঞ থাকব

উত্তর

কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজের জন্য রাখা, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে আর এক ভাগ ফকীর মিসকীনকে দেওয়া মুস্তাহাব। তবে এভাবে তিন ভাগে বণ্টন করা জরুরি নয়। কেউ পুরো গোশত নিজের জন্য রেখে দিলেও তার কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তাই আপনি চাইলে যেখানে আছেন সেখানেই কুরবানী করতে পারেন। সেখানে গোশত দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া না গেলেও কোনো অসুবিধা হবে না

আর প্রশ্নে যে দুটি হাদীসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে উভয় হাদীসই নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত আছে। প্রথম হাদীসটি হল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর গোশত বণ্টন সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজ পরিবারের জন্য রাখতেন, এক ভাগ গরীব প্রতিবেশীকে দিতেন আর এক ভাগ অন্যান্য গরীব-মিসকীনকে দান করতেন।-আল ওযায়েফ, আবু মুসা আলআসবাহানী, মুগনী ইবনে কুদামা ১৩/৩৭৯-৩৮০

দ্বিতীয় হাদীসটি হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কুরবানীর গোশত যে পরিমাণ ইচ্ছা খাও, অন্যদেরকে খাওয়াও এবং যতটুকু ইচ্ছা জমা করে রাখ।-সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ১৫১০

দ্বিতীয় হাদীস দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, কুরবানীর গোশত বণ্টনের বিষয়টি কুরবানীদাতার ইচ্ছাধীন। অন্যকে না দিলেও গুনাহ হবে না। আর প্রথম হাদীসে কুরবানীর গোশত বণ্টনের উত্তম পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। তাই উভয় হাদীসের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৭২; মুয়াত্তা, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ২৮১-২৮২; হিদায়া /৪৫০; উমদাতুল কারী ১০/৫৭-৫৮; বাদায়েউস সানায়ে /২২৪; আলবাহরুর রায়েক /১৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া /৩০০; আদ্দুররুল মুখতার /৩২৭-৩২